অস্ট্রেলিয়া হওয়ার কথা ছিল না। উজবেকিস্তান ক্ষীণ আশা রেখেছিল। সিরিয়া হতেই পারত। এএফসি এশিয়ান কাপের গ্রুপ লিগের তিন ম্যাচ পর প্রাপ্তি কী? হাতে রইল পেন্সিল! ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, বাহরিনের মতো টিম পেরিয়ে নক আউটে পা দেবে ভারত, তা কেউ ভাবেনি। হয়ওনি। ২০১৯ সালে গ্রুপ লিগের ম্যাচে জিতেছিল দুর্বল থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে। চার বছর পর কতটা এগোল ভারতীয় ফুটবল? ঘুরে-ফিরে সেই উত্তরই দিতে হবে, হাতে রইল পেন্সিল। ৩৯ বছরের সুনীল ছেত্রীকে আর খেলতে দেখা যাবে না এশিয়ান কাপে, এর বাইরে তেমন কিছু বদলাবে আগামী দিনে? এই প্রশ্নও রেখে গেলেন ইগর স্টিমাচ।
৩ ম্যাচ জিতে ৭ পয়েন্ট নিয়ে নক আউট গেল অস্ট্রেলিয়া। উজবেকিস্তান ৫ পয়েন্ট নিয়ে। সিরিয়ার মুঠোয় থাকল ৪। ভারতের ঝুলিতে শুধুই শূন্যতা। ২০১১ সালের মতো গ্রুপ লিগের তিনটে ম্যাচ হেরেই বিদায় নিতে হল নিখিল, উদান্তা, মহেশদের। ৭৫ মিনিট পর্যন্ত গোলের দরজায় পিঠ দিয়ে প্রাণপণে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভারতীয় ডিফেন্ডাররা। ক্রমাগত ঝড় আর কতক্ষণ আটকাতে পারতেন? সন্দেশ ঝিঙ্ঘান ৪৬ মিনিটে মাঠ ছাড়তেই আশঙ্কা বাড়ছিল একটু একটু করে। গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু, লেফটব্যাক শুভাশিস বসুরা কতক্ষণ সামলাবেন দুর্গ। এশিয়ার সেরা ফুটবলার, সিরিয়ার ক্যাপ্টেন ওমর খারবিন গোল করে গেলেন ৭৬ মিনিটে। প্রশ্ন উঠছে, বিদেশি টিম মানেই ডিফেন্স আঁকড়ে পড়ে থাকা? পাল্টা আক্রমণ থাকতে পারে না? জয়ের স্বপ্ন দেখা যাবে না? পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা সৈয়দ নইমউদ্দিনও যা করতেন, বব হাউটন থেকে ইগর স্টিমাচরাও তাই করেন। হাউটন কিংবা স্টিমাচদের ৫ বছরের ভারতীয় পর্বে প্রাপ্তি স্রেফ এএফসি কাপের গ্রুপ পর্যায়। বিদেশি কোচ তা হলে দরকার কেন? এ সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি, মিলবেও না। গত ১২ বছরে তিনবার এশিয়ান কাপ খেলার সুযোগ মিলল, এটাই তো অনেক!
সুনীলের ভারত কিন্তু উত্তর মেলানোর চেষ্টা করেছিল সিরিয়ার বিরুদ্ধে। আর্জেন্টাইন কোচ হেক্টর কুপার, ব়্যাঙ্কিং ৯১; এ সব দিয়ে সিরিয়াকে মাপা যাবে না, জানতেন সন্দেশ-রাহুলরা। পাবলো সাবাগ, মাহমুদ আলসাদ, ওমর খারবিনদের মতো ফুটবলার রয়েছেন। এশিয়া থেকে লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু ভালো ক্লাবে খেলেন যাঁরা, তাঁদের হারানোর স্বপ্ন দেখা আর হারানো এক নয়। ভারত তাই রক্ষণাত্মক ছকেই নেমেছিল। মাঝে মাঝে পাল্টা আক্রমণ। অজি, উজবেকদের মতো কঠিন প্রতিপক্ষ নয় বলে খানিকটা লড়াইও দেখা গিয়েছে। সেও শুরুর দিকে, যৎসামান্য। খেলা যত গড়িয়েছে, ততই নিজেদের ব্যালকনিতে আটকা পড়েছেন সুনীলরা। কোনও রকমে গোললাইন সেভ না হলে প্রথমার্ধে স্কোরলাইন হতে পারত ৩-০। বিরতির পর আরও ৩ গোল।
ম্যাচের পর বরাবরের সেই চেনা ছবি। ভারতীয় ডাগআউটে শূন্যতা। উল্টোদিকে সিরিয়া উৎসবে মাতল। যদি তৃতীয় সেরা হতে পারেন ওমর-পাবলোরা, নক আউটে যাবেন। এই প্রথম বিরল স্বাদ পাবে সিরিয়া।

