আত্মঘাতী মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, প্রতিবেশী যুবক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের

কটুক্তি এবং হেনস্তার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হল এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সোমবার ভোরে ওই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়েছে পুরাতন মালদা থানার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মঙ্গলবাড়ি গান্ধি কলোনী এলাকায়। মৃত ছাত্রীর বাবা ও মা প্রতিবেশী এক যুবক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নিজের মেয়েকে কটুক্তি এবং উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ জানিয়েছে পুলিশে। এই ঘটনার পর পাড়া-প্রতিবেশীরাও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে নিজেদের ক্ষোভ জানিয়েছেন।

এদিন পুরাতন মালদা থানার পুলিশ ওই ছাত্রীর দেহ তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। পরে মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এদিকে এই ঘটনার অভিযোগ দায়ের হতেই গা ঢাকা দিয়েছে প্রতিবেশী যুবক ও তার পরিবার।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ছাত্রীর নাম পায়েল দাস (১৬)।  মৃত ছাত্রীর বাবা পাণ্ডব দাস পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী। মা গৃহবধূ পম্পা দাস। পরিবারের দুই মেয়ের মধ্যে পায়েল ছিল বড়। এদিন বাড়ির লোকেদের অলক্ষ্যে নিজের শোবার ঘরে গলায় ওড়না জড়িয়ে আত্মঘাতী হয়েছে ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।

মৃত ছাত্রীর মা পম্পা দাসের অভিযোগ, প্রতিবেশী এক যুবক ও তার পরিবার সবসময় আমার মেয়েকে রাস্তাঘাটে ধরে হেনস্তা করত, কটুক্তি করত। আজেবাজে ভাষায় কথা বলত। এমনকী আমার মেয়েকে প্রতিবেশী ওই যুবক জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও পর্যন্ত দিয়েছিল। এসব নিয়ে মেয়ে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি চরম আতঙ্কে ছিল। আর কিছুদিন পর মাধ্যমিক পরীক্ষা। বাড়ি থেকে বেরনো বন্ধ করে দিয়েছিল আমার মেয়ে। কিন্তু প্রাইভেট থেকে  যেখানেই যেতে হত সেখানেই মেয়েকে ওরা ভয় দেখিয়ে হেনস্তা করত। এসব কিছু সহ্য করতে না পেরে আতঙ্কে পায়েল গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। পুরো বিষয়টি আমরা পুলিশকে জানিয়েছি।

মৃত ছাত্রীর বাবা পাণ্ডব দাসের অভিযোগ, প্রতিবেশী যুবক ও তার পরিবারের লোকেরা আমার মেয়ের সঙ্গে যেভাবে আচরণ শুরু করেছিল তাতেও আমরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলাম। ওদের এই আচরণের জন্য আমরা প্রতিবাদও জানিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা কোনও কথাই শুনছিল না। জোর করে ওরা আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। মেয়ে ভয়ে পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছিল। রবিবার বামনগোলায় এক আত্মীয়র বাড়িতে আমরা নিমন্ত্রণ খেতে গেছিলাম। বড় মেয়ে ও তার মাসিকে বাড়িতে রেখে গিয়েছিলাম। এদিন ভোরেই মেয়ে বাড়ির লোকেদের অলক্ষ্যে শোবার ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়। এই ঘটনায় পুরাতন মালদা থানায় অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন মৃত ছাত্রীর পরিবার।

স্থানীয় কাউন্সিলর ঋণী দাস পাল জানিয়েছেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। যদি এরকম কোনও অভিযোগ হয়ে থাকে অবশ্যই পুলিশ যাতে দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে সেই দাবিও রাখব। পুরাতন মালদা থানার পুলিশ জানিয়েছেন, চারজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চালানো হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × one =