দীর্ঘ টাল-বাহানা শেষে শুরু পৌষ মেলা, ভার্চুয়াল উদ্বোধনে কড়া বার্তা মমতার

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ হাত তুলে নিয়েছিল। তবে এ বছর রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বহু টাল-বাহানার পর পূর্বপল্লীর মাঠে তিন বছর পরে ফিরল পৌষ মেলা। বাউল গানের সুরে মাতল মেলা প্রাঙ্গণ। আর সেই পৌষমেলার উদ্বোধন হল রাজ্য সরকারের হাত ধরেই।
রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে স্মরণ করে ও অমর্ত্য সেনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে মেলার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকাল থেকে বৈতালিক, ব্রহ্ম উপাসনা, বৈদিক মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে বিশ্বভারতীতে শুরু হয় পৌষ উৎসব। উদ্বোধন অনুষ্ঠান থেকেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের পৌষ মেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত মানুষ ভাল ভাবে নেয়নি বলেও মন্তব্য তাঁর।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই জায়গা কেউ কলুষিত করুক চাই না। কোনও স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে বিশ্বভারতী চালালে হবে না। আশ্রমিক থেকে পড়ুয়া সকলকেই সম্মান দিতে হবে।’
রবিবার থেকে শান্তিনিকেতনে শুরু হওয়া পৌষমেলা  চলবে পাঁচ দিন। সব মতানৈক্য কাটিয়ে মেলা শুরু হতেই জেলায় খুশির হাওয়া। পৌষমেলা ঘিরে সাজসাজ রব শুরু হয়েছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এবং শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট জানিয়ে দিয়েছিল এবার পৌষমেলা হবে না। তারপরেই স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে তুমুল ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। তখনৎ রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে রাজ্যের তরফেই এবার পৌষমেলা আয়োজন করা হবে। সেই মতোই এদিন শুরু হয়েছে পৌষমেলা।
রাজ্যের তরফে পৌষমেলার আয়োজন নিয়েও বিস্তর টানাপড়েন চলেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের মধ্যে। প্রথমে মেলার মাঠ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। বিশ্বভারতীর তরফে মাঠ দেওয়ার জন্য একাধিক শর্ত আরোপ করে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। পাল্টা চিঠি দিয়ে প্রশাসন জানিয়েছিল তাদের পক্ষে এত শর্ত মেনে চলা সম্ভব নয়। পরে অন্যত্র রাজ্য প্রশাসনের তরফে মেলার আয়োজন হয়েছে।
পৌষমেলার সঙ্গে পৌষ উৎসব শুরু হয় ৭ই পৌষ ভোরে। গৌরপ্রাঙ্গনে বৈতালিকের মধ্যে দিয়ে। সকাল ৬টায় শান্তিনিকেতন গৃহে সানাই, ছাতিমতলায় ৭টায় উপাসনা। বাউল গানের মধ্যে দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে  পৌষ মেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে সকাল ১১টা নাগাদ। ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আম্রকুঞ্জে আশ্রমিক সঙ্ঘের অনুষ্ঠান রয়েছে দুপুর ৩টে নাগাদ সাড়ে তিনটে নাগাদ আলাপিনী মহিলা সমিতির অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ছাতিমতলা এবং উদয়নে আলোকসজ্জা। রাত্র ১০টায় মেলাপ্রাঙ্গনে যাত্রার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৭ পৌষ ব্রহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই দিনটিকে স্মরণ করে প্রতি বছর পৌষ উৎসবের আয়োজন করত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বসত মেলা। ২০১৯ সালে কোভিডের সময় থেকে মেলা বন্ধ ছিল। তৎকালীন উপচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর পৌষমেলা বন্ধ রাখার  নির্দেশে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। পরে ২০২২ সালে ডাকবাংলো মোড়ে ছোট করে পৌষমেলার আয়োজন করেছিল জেলা প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + nineteen =