আজও মা কালীর মূর্তি তৈরি ৮৪ বছরের বৃদ্ধর

নিজস্ব প্রতিবেদন, বুদবুদ: বুদবুদের কোটা গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারের কালীপুজো এবার ৩২২ বছরে পদার্পণ করল। ভট্টাচার্য পরিবারের দেবী কালী এখানে ‘বড়মা কালী’ নামেই পরিচিত। দেবী কালীর উচ্চতা এখানে প্রায় ২২ ফুট। নিজের হাতেই মা কালীর মূর্তি তৈরি করেন ৮৪ বছরের বৃদ্ধ।
পরিবারের সপ্তম পুরুষ নির্মলেন্দু ভট্টাচার্য মাচা তৈরি করে তার ওপর উঠে নিজেই মূর্তি তৈরি করে নিজের হাতেই দেবীর মূর্তি রং করে নিজেই পুজো করেন। এই মূর্তি তৈরির কাজে সাহায্য করেন পরিবারের সদস্যরাও। নির্মলেন্দুবাবু জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের পূর্বপুরুষ মনোহর ভট্টাচার্য প্রায় ৩২২ বছর আগে কাটোয়ার গঙ্গা স্নান করতে যাওয়ার পথে কাটোয়ার গঙ্গার ধারে অবস্থিত গৌরাঙ্গ ঘাটের পাশে শ্যামা কালী মন্দির সংলগ্ন ধর্মশালায় স্নান করার পর সেখানেই তিনি বিশ্রাম করছিলেন। সেই সময় তিনি স্বপ্নাদেশ পান। তাঁকে দেবী কালী স্বপ্নাদেশে জানান, দেবী কালী তাঁর বাড়িতে গিয়ে পুজো নিতে চান। দেবীর কথা শুনে মনোহর বাবু দেবীকে জানিয়েছিলেন তিনি একজন গরিব ব্রাহ্মণ, তিনি কী ভাবে একটা বড় পুজোর আয়োজন করবেন। দেবী তাকে বলেছিলেন, শুধু পুজোর উদ্যোগ নিতে হবে তাঁকে, বাকি পুজোর ব্যবস্থা দেবী নিজেই করবেন।
এরপরই কাটোয়ার গঙ্গা ঘাট থেকে দেবী কালীকে কাঁধে করে বুদবুদের কোটা গ্রামে নিয়ে আসেন মনোহরবাবু। তাঁর স্বপ্নাদেশের কথা তিনি পরিবার ও গ্রামের মানুষদের জানান। এরপরই গ্রামেরই এক কারিগর নিজেই এগিয়ে এসে ২২ ফুটের মূর্তি তৈরি করেন এবং সেখানে সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় সাড়ম্বরে পুজোর আয়োজন করা হয়।
কোটা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ রায় জানিয়েছেন, এত বড় পুজো পরিচালনায় প্রতিবেশীরাও অংশগ্রহণ করেন এবং ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের পুরুষেরা দেবী কালীর ভোগ এবং পুজোর সমস্ত জোগাড় করেন। তবে এই পুজোর আয়োজনে কোনও মহিলা অংশগ্রহণ করতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে এই রীতি চলে আসছে এখানে। শোনা যায়, দেবীর কাছে কেউ মনস্কামনা করলে তাঁদের মনস্কামনা পূরণ হয়। পুজোর পরের দিন অন্ন ভোগ বিতরণ করার পর রাতে দেবীর প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।
নির্মলেন্দুবাবুর ছেলে কালিদাস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, বাবার বয়স হয়ে গিয়েছে শরীর সাথ না দিলেও মনের জোরে এখনও সব করে। তবে বাবার মূর্তি গড়া থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজেও বাড়ির পুরুষরা সাহায্য করেন। তাঁদের পুজোর রীতি হল পরিবারের কেউ একজনকে এই পুজোর সমস্ত দায়িত্ব নিতে হয়। মূর্তি গড়া থেকে শুরু করে দেবীর পুজোর। পুজোর দিন শুধু মাত্র বলি প্রথা চালু থাকলেও বছরের অন্যান্য সময় বলি হয় না। বাড়ির বড় বউমা পদ্মাবতী ভট্টাচার্য ২৮ বছর আগে বিয়ে হয়ে এই পরিবারে এসেছেন। সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন এই পুজোর জন্য। পরিবারের মহিলারা ভোগ তৈরির কাজে হাত না দিলেও পুজোর অন্যান্য কাজে তাঁরা সকলেই যোগ দেন। পুজোর দুটো দিন মহা আনন্দেই কাটে তাঁদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + 9 =