বাংলা এখন গেম চেঞ্জারের ভূমিকা পালন করছে, বার্সেলোনায় শিল্পপতিদের বার্তা মমতার

বিগত কয়েকদিন ধরেই ঘুরছেন স্পেনে। মাদ্রিদে লা লিগার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যেই মউ স্বাক্ষরও করে ফেলেছে।  রবিবারই স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ থেকে রেলযোগে সৈকতশহর বার্সেলোনায় পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার বিশেষ কোনও কর্মসূচি না থাকলেও মঙ্গলবার যোগ দেন বাণিজ্য বৈঠকে। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীরাও। সেখানেই ভারত ও স্পেনের মধ্যের ক্রস কানেকশনের উল্লেখ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাণিজ্য বৈঠকে যোগ দিয়ে এই ক্রস কানেকশনের ব্যাখ্যা দিলেন।

বার্সেলোনায় মঙ্গলবার বাণিজ্য সম্মেলনে বাঙালির মেধার কথা বিশেষ করে উল্লেখ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এর আগে তিনি বাংলার পরিকাঠামো, সামাজিক সুরক্ষা, কয়লা, গ্যাস, সস্তা শ্রমিক ইত্যাদির কথা বলে শিল্পপতিদের আকর্ষণ করতে চেয়েছেন। কিন্তু এদিন তিনি গুরুত্ব দিলেন বাঙালির মেধার ওপরে। তাঁর বক্তব্য, মেধায় বাংলা রয়েছে শীর্ষে। ভারতের চন্দ্রযান সম্প্রতি চাঁদে অবতরণ করেছে। সেই প্রকল্পে যে বিজ্ঞানীরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের ৪০ শতাংশ বাঙালি।

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বাংলা এখন গেম চেঞ্জার। সারা ভারতে ম্যানুফ্যাকচারিং-এর ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বরে। এই রাজ্য এখন অর্থনীতির পাওয়ার হাউস। ভারতে যে রাজ্যগুলির অর্থনীতি সবচেয়ে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে, বাংলা তাদের মধ্যে অন্যতম। ২০২২-২৩ সালের আর্থিক বছরে এখানকার অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে ৮.৪১ শতাংশ। করোনা অতিমারির ধাক্কা সত্ত্বেও বিকাশের ওই হার অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। ২০২৩-২৪ সালের আর্থিক বছরে বাংলার জিডিপি হবে ২০০ কোটি ইউরোরও বেশি।

এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে এসেছিলেন প্রবাসী বাঙালিরাও। তাঁরা রীতিমতো মুগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এই প্রথম স্পেনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনও প্রতিনিধি এলেন। আগে গুজরাত সরকারের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। তাঁরা অনেক শিল্পপতিকে তাঁদের রাজ্যে নিয়ে গিয়েছেন। প্রবাসী বাঙালিরা স্থির করেছেন, তাঁরা যে যে কোম্পানিতে কাজ করেন, সেখানে অনুরোধ করবেন যাতে তারা পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করে। মমতার সফরসঙ্গী তথা রিলায়েন্সের কর্তা তরুণ ঝুনঝুনওয়ালা বলেন, শিল্পপতিদের সঙ্গে যদি রাজ্য সরকারের প্রধানও বিদেশে আসেন, শিল্পপতিদের আহ্বান জানান, তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, পশ্চিমবঙ্গ এখন উত্তর-পূর্ব ভারতের গেটওয়ে। এই রাজ্যে রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোল ব্লক। এদিন মঞ্চে উঠে মমতা বলেন, ‘ভারত এবং স্পেনের মধ্যে বরাবরই একটা ক্রশ কানেকশন রয়েছে। আর আমি এসেছি বাংলা থেকে। কিন্তু, এখন বলতে খুব গর্ববোধ করছি যে বাংলাই বর্তমানে গোটা ভারতকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইউরোপে স্পেনের হাত ধরে রেনেসাঁ শুরু হয়েছিল। আর ভারতে তা শুরু হয়েছিল বাংলার হাত ধরে। এই দুই প্রদেশের মধ্যে এই মিল রয়েছে। আমি আপনাদের চিত্রকলা, বই, সিনেমা, সংßৃñতিকে সাধুবাদ জানাই। আপনাদের খেলোয়াড়রা যখন ফুটবল ময়দানে নামে আমরা তখন সারারাত জেগে আপনাদের খেলা দেখি। আপনাদের খেলা দেখে আমরা মুগ্ধ হই। ইউ লাভ পেন্টিংস, আই লাভ পেন্টিংস। ইউ লাভ মিউজিক, উই লাভ মিউজিক। ইউ লাভ ফুটবল, উই আর ক্রেজি ফর ফুটবল।’

কন্যাশ্রী থেকে লক্ষ্মীর ভান্ডার, দুয়ারে সরকার, এদিন বাণিজ্য বৈঠকে মমতার মুখে শোনা গেল তাঁর হাত ধরে শুরু হওয়া একাধিক জনহিতকর কাজের কথা। কীভাবে নাগরিকদের সামাজিক সুরক্ষার দিক থেকে রোজই নিত্যনতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করছে বাংলা। সেই খতিয়ানও তুলে ধরেন মমতা। এরপরই এদিন তাঁর মুখে ফের শোনা যায় লালিগার সঙ্গে মউ স্বাক্ষরের কথাও। বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, গান্ধিজি, মাতঙ্গিনী হাজরা, বাবা সাহেব আম্বেদকর আমাদের দেশের লোক। আমরা তাঁদের থেকে শিক্ষা নিই। আমরা লালিগার সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করেছি। তাঁরা আমাদের খেলার দিকে নানা পরামর্শ দেবে। তাঁরা আমাদের দেশে আসবে। কিন্তু, ইতিমধ্যেই আমরা তাঁদের হাতে স্টেডিয়াম দিয়েছি। সে কথা বলেছি। কারণ তাঁরা যাতে দ্রুত আমাদের ছেলেমেয়েদের তৈরি করতে পারে। অনেক স্প্যানিশ প্লেয়ার ইতিমধ্যেই আমাদের আইএসএল ও আইপিএলে খেলাধূলা করে। তাঁরা আমার খুবই স্নেহধন্য, খুব প্রতিভাবানও বটে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × four =