ঝুলে থাকা মামলার দ্রুত সুবিচার চাইতে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন অম্বিকেশ মহাপাত্র

অশোক সেনগুপ্ত

সাড়া জাগানো কার্টুন-কাণ্ডের এক দশক পূর্ণ হল। আইনী জট ছাড়াতে এবার উদ্যোগী হচ্ছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিষ্ঠ অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র। তিনি চিঠি দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে। চিঠির প্রতিলিপি পাঠাচ্ছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে।

২০১২ সালের ১২ এপ্রিল গ্রেফতার হয়েছিলেন অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র। কেন, কোন পরিস্থিতিতে এক দশক বাদে প্রধান বিচারপতির শরনাপন্ন হচ্ছেন তিনি? এই প্রতিবেদককে জবাবে বলেন, “আমার গ্রেফতারের ঘটনায় হইচই হওয়ার পর মানবাধিকার কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায় স্বতপ্রণোদিত হয়ে (সুয়ো মোটো) তদন্ত করেন। তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রঞ্জিত পচানন্দা, অতিরিক্ত কমিশনার, ঘটনাস্থল অর্থাৎ পূর্ব যাদবপুর থানার অতিরিক্ত ওসি, এসআই প্রমুখকে কমিশনের অফিসে ডেকে জেরা করেন। সব কিছু খতিয়ে দেখার পর ২০১২-র ১৩ আগস্ট আমাকে নির্দোষ সাব্যস্ত করে স্বরাষ্ট্র দফতরকে সুপারিশ করেন। তাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শুনানীর ভিত্তিতে শাস্তি দেওয়ার এবং আমাদের দুই ভুক্তভোগীকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানান।“

বস্তুত কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির দায়িত্ব থেকে অবসর নেন ’১২-র ফেব্রুয়ারিতে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদটি ফাঁকা ছিল। ওনাকে সে বছর এপ্রিলে ওই পদের দায়িত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী। অশোকবাবুর সুপারিশের পর দিন অর্থাৎ ১৪ আগস্ট মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভা ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি একজন ভাল লোক ভেবে মানবাধিকার কমিশনে ওনাকে নিয়ে এলাম। কিন্তু কীভাবে রিপোর্ট লিখতে হয় উনি জানেন না। নিজেকে কী মনে করেন, রাষ্ট্রপতি না সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি?“ তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ না মানায় আমরা হাই কোর্টে যাই। ২০১৫-র ১০ মার্চ বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর বেঞ্চ কমিশনের সুপারিশ ৩০ দিনের মধ্যে কার্যকরী করার নির্দেশ দেয়। এর পর ৭ বছরের ওপর কেটে গেছে।“

অম্বিকেশবাবুর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলতে থাকে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের যে ৬৬এ ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছিল, তা ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হয়ে যায়। তার পরেও আলিপুর পুলিশ কোর্টে সিজেএম-এর ঘরে ২০২০-র ২২ ফেব্রুয়ারি শুনানি হয় কার্টুন-মামলার। ওই মামলায় সহ-অভিযুক্ত সুব্রত সেনগুপ্ত ২০১৯-এর ১১ এপ্রিল মারা যান। অম্বিকেশবাবুর সঙ্গে ২০২০-র ২২ ফেব্রুয়ারি হাজির ছিলেন ‘আক্রান্ত আমরা’র একটি প্রতিনিধিদল। অম্বিকেশবাবু বলেন, ‘‘বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার কথা হয়তো বলা হবে। কিন্তু বিচারে বিলম্ব মানে তো অবিচার।’’ কত দিন হয়রানি চলবে, প্রশ্ন তোলে ‘আক্রান্ত আমরা’। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয় ১৮ মার্চ। এভাবে চলতে থাকে।

কেন এতদিন বাদে সুপ্রিম কোর্ট, কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির শরনাপন্ন হচ্ছেন?সোমবার অম্বিকেশবাবু এই প্রতিবেদককে বলেন, “বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সরকারপক্ষ ডিভিশন বেঞ্চে যায়। সরকারপক্ষের আইনজীবীর লাগাতার অনুপস্থিতির পর ২০২০-র ১২ মার্চ আমার পক্ষে রায় দেয়। এর পর ফের রাজ্য আমার বিরুদ্ধে মামলা চালাতে উদ্যোগী হয়। আমার কর্মজীবনের একটা মূল্যবান সময় এভাবে আইনি লড়াই করলাম। ছলে-বলে-কৌশলে আমার আইনি অধিকারও খর্ব করা হচ্ছে। এর সুবিচার পেতে চাই।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × three =