পাহাড়ি পাকদণ্ডী, সোজা উঠে যাওয়া গাছ, আর বয়ে চলা স্রোতস্বিনী পার্বতী। ছবির মতো সাজানো এই পথ ধরেই পৌঁছনো যায় মণিকরণ (Manikaran)। যা শিখ ও হিন্দুদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র।আর এ জায়গায় পৌঁছলেই আপনি দেখবেন নদী কেমন ফুটছে। চারদিক দিয়ে গলগলিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
এই জল ফোটার কারণ হল, মণিকরণে রয়েছে উষ্ণ প্রস্রবণ (Hot Water spring)। এই উস্র প্রস্রবণের জল এতটাই গরম যে, সেই জলে রান্না পর্যন্ত হয়ে যায়। সালফার মিশ্রিত এই গরম জলে স্নান করলে ব্যথা-বেদনা, রোগ, ব্যাধি দূর হয় মনে করেন অনেকে।
সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১,৭৬০ মিটার উচ্চতায় পার্বতী নদীর উপত্যকায় অবস্থিত, হিমাচল প্রদেশের (Himachal Pradesh) মনিকরণ হিন্দু ও শিখ দুই ধর্মের মানুষের কাছে একটি পবিত্র তীর্থস্থান। সিমলা থেকে মানালি আসার পথে পড়ে ভুন্টার। তারপর কুলু। ভুন্টার থেকেই একটি রাস্তা চলে গেছে মানালির দিকে। আর একটি রাস্তা চলে গেছে কাসল হয়ে মনিকরণে। ভুন্টার থেকে প্রায় ৩৬ কিমি দূরে মণিকরণ। এখানে এক সঙ্গে অবস্থান প্রাচীন গুরুদ্বারা ও শিবমন্দির। পার্বতী নদীর জল এখানে ফুটন্ত।
হিন্দু পৌরাণিক মত অনুসারে, একবার মহাদেব ও পার্বতী এখানে ভ্রমণ করতে আসেন। কথিত আছে যে এখানে পার্বতী তাঁর অলংকারের একটি দামি মণি হারিয়ে ফেলেন। সেটি নদীতে তলিয়ে পাতালে শেষনাগের কাছে চলে যায় ও তিনি সেটি কুক্ষিগত করেন। পার্বতী মহাদেবের কাছে তাঁর মনিটি উদ্ধারের প্রার্থণা করেন। মহাদেব তাঁর সঙ্গীদের প্রেরণ করেন মনি উদ্ধারের জন্য। কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হন। প্রচণ্ড রাগে মহাদেবের তৃতীয় চক্ষু উন্মোচিত হয়। সারা জগৎ সংসার ছারখার হবার উপক্রম হয়। ফুটতে শুরু করে পার্বতী নদীর জল। শেষে কুপিত মহাদেবের সামনে উপস্থিত হয়ে শেষনাগ মণি ফিরিয়ে দেন। মহাদেবের রাগ কমলেও, নদীর জল আজও ফুটন্ত।
মজার ব্যাপার এখানে আশপাশে যে কয়েকটা খাবার জায়গা আছে সেখানে গেলে দেখবেন নর্দমা, ফুটো-ফাটা সব জায়গা কাঠের পাটাতনে ঢাকা। আসলে উষ্ণ প্রস্রবণের জল থেকে এখানে ফাঁক ফোঁকর পেলেই ধোঁয়া বেরিয়ে আসে।
শিব মন্দিরের পাশাপাশি এখানে আছে গুরুদ্বার।নদীর ওপর দিয়ে রয়েছে সেতু। সেই সেতু পেরিয়েই পৌঁছনো যায় বিশাল গুরুদ্বারে।সেখানে রয়েছে লঙ্গরখানা। সময়ে এলে আপনিও খেতে পারবেন রুটি, সবজি। বিকেলে গেলে পাবেন স্টিলের গ্লাসে গরম চা। তবে হ্যাঁ, নিজের বাসন নিজেকেই ধুয়ে নিতে হবে।
এই জায়গা নিয়ে শিখদের মধ্যেও বিশেষ কাহিনি প্রচলিত। সেই কাহিনি অনুযায়ী একবার গুরু নানক সেখানে এসেছিলেন। তাঁর ভক্ত ছিলেন ক্ষুধার্ত। গুরুর নির্দেশে তিনি ভিক্ষা করে আটা, ময়দা জোগাড় করতে পারলেও রান্নার আগুন ছিল না।গুরু নানকের নির্দেশে তিনি একটি পাথর তোলেন। সেখান থেকে উষ্ণ প্রস্রবণ বেরিয়ে আসে।