টিভি সিরিয়ালের অতি পরিচিত মুখ সুচন্দ্রা দাশগুপ্ত। শ্যুটিং সেরে শনিবার রাতে অ্যাপ বাইকে চেপে সোদপুরের বাড়িতে ফিরছিলেন জনপ্রিয় ওই টেলি অভিনেত্রী। কিন্তু বরানগরে পথ দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স ছিল ৩০ বছর। ‘গৌরী এলো’-সহ একাধিক ধারাবাহিকে তিনি অভিনয় করেছেন। জানা গিয়েছে, শ্যুটিং সেরে পানিহাটির রেলওয়ে পার্ক এলাকায় বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসছিলেন ওই টেলি অভিনেত্রী। যদিও বিয়ের পর থেকেই স্বামী দীপাংশু সেনগুপ্তের সঙ্গে নরেন্দ্রপুরে একটি আবাসনে থাকতেন অভিনেত্রী। ঘটনা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বরানগর ঘোষপাড়ায় এক সাইকেল আরোহী রাস্তা পারাপার করছিলেন। সাইকেল আরোহীকে বাঁচাতে গিয়ে বাইকটি সজোরে ব্রেক কষেন। তখন বাইক থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়েন অভিনেত্রী। সেইসময় পিছন দিক থেকে আসা একটি মালবাহী ট্রাক তাঁর মাথায় ওপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অভিনেত্রীর। এমনকী অভিনেত্রীর মাথায় থাকা হেলমেট ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। বরানগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘাতক ট্রাক-সহ চালককে আটক করেছে। বরানগর থানার পুলিশ জানিয়েছে, নরেন্দ্রপুর এনএসসি বোস রোডের বাসিন্দা দীপাংশু সেনগুপ্ত শনিবার রাতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, মোটর বাইকে চেপে তাঁর স্ত্রী সুচন্দ্রা দাশগুপ্ত অফিস থেকে ফিরছিলেন। বরানগর ঘোষপাড়ায় বাইকের পিছনে ধাক্কা মারে একটি বেপরোয়া লরি। বাইক থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়লে ঘটনাস্থলেই তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল গৌরী এলো-তে একটি ক্যামিও চরিত্রে দেখা যায় সুচন্দ্রা দাশগুপ্তকে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে বেশ কয়েকটা দিন এক ওঝার শিষ্যার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তবে বর্তমানে সেই ধারাবাহিকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না তিনি। শনিবার রাতে শ্যুটিং সেরেই ফিরছিলেন সুচন্দ্রা, তবে সেটা কীসের শ্যুটিং তা অবশ্য জানা যায়নি। অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবর সামনে আসতেই শোকের ছায়া টলিপাড়াতেও। তাঁর সহ অভিনেতা অভিনেত্রীরা অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকবার্তা জানিয়েছেন। সুচন্দ্রার অকালপ্রয়াণে স্তম্ভিত টেলিপাড়া।
তবে সেই সঙ্গে তাঁদের একাংশ কাঠগড়ায় তুলেছে ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতিকে। পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিকও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, মাত্র ৩০ বছর বয়সেই মর্মান্তিক পথদুর্ঘটনার শিকার হয়ে ঝড়ে গেল এমন তরতাজা একটি প্রাণ। সুচন্দ্রা-ঘনিষ্ঠরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তাঁর এই চলে যাওয়া। শনিবার রাতে শ্যুটিং থেকে ফেরার সময়ে অ্যাপের মাধ্যমে বাইক বুক করেন অভিনেত্রী। সেই বাইকে করেই বিটি রোডের ওপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
সুচন্দ্রা দাশগুপ্তর মৃত্যু প্রসঙ্গে শিলাদিত্যর মন্তব্য, শহরের জনবহুল রাস্তা দিয়ে প্রায়ই দেখা যায় দ্রুতগতির ট্রাক। ট্রাফিক পুলিশ শুধু গভীররাতে মদ্যপ গাড়িচালকের থেকে ফাইনের টাকা নিতে ব্যস্ত। পুজো, নববর্ষ এসব সময় তাঁরা এই ব্যাপারে আরও কর্মঠ হয়ে ওঠেন। দাদা, যন্ত্রে ফুঁ দিতে অসুবিধা নেই কিন্তু নির্দোষ কয়েকটা মানুষের জীবন এক ফুঁয়েই উড়ে যাচ্ছে ওটাও একটু দেখুন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সুচন্দ্রার মাথায় হেলমেটও ছিল। তবে বাইক থেকে ছিটকে পড়ে যাওয়ার সময় পিছন দিক থেকে লরি এসে পিষে দিয়ে যায় অভিনেত্রীর দেহ। কিছুতেই স্ত্রীয়ের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না স্বামী দীপাংশু। আইটি সেক্টরে কর্মরত তিনি।
অভিনেত্রীর স্বামী জানিয়েছেন, শনিবার রাত পৌনে ১২টা থেকে তিনি এবং সুচন্দ্রার বাবা ফোন করার চেষ্টা করছিলেন। ধরেননি অভিনেত্রী। সুচন্দ্রা কাজে ব্যস্ত রয়েছে বলে তাই আর বিরক্তও করেননি তাঁরা। ভেবেছিলেন পরে ফোন আসবে। তবে সেই টেলিফোন আর আসেনি। পরে গভীর রাত পর্যন্ত ফোন না আসায় সুচন্দ্রার মেসো প্রথমে খড়দহ থানায় যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে বরানগর থানায় ফোন করলে জানা যায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে সুচন্দ্রা দাশগুপ্তর।