কুন্তল ঘোষের ১০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করল ইডি। ইডি-র আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, এই অ্যাকাউন্টগুলিতেও কোটি টাকার উপরে রয়েছে। এরই পাশাপাশি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২০টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে ইডি। শান্তনুর এই সমস্ত অ্যাকাউন্টে প্রায় দেড় কোটি টাকা মিলেছে বলেও জানানো হয়েছে ইডি-র তরফ থেকে। কুন্তলের পাশাপাশি ফ্রিজ করা হয়েছে শান্তনুর অ্যাকাউন্টও। এখনও পর্যন্ত শান্তনুর ২৫টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তদন্তকারীরা ফ্রিজ করেছে বলে ইডি সূত্রে খবর। ইডি সূত্রে এও জানানো হয়েছে, শান্তনু, তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা এবং কোম্পানির অ্যাকাউন্ট আছে।
প্রসঙ্গত, কুন্তল এবং শান্তনু দুজনেই হুগলির দাপুটে নেতা বলেই পরিচিত ছিলেন এতদিন। এরপর নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি-র হাতে গ্রেপ্তারের পরই তৃণমূলও তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করেছে। এবার সেই কুন্তল-শান্তনুরই কথার লড়াই রোজনামচা। এর আগের দিনই কুন্তলকে গোটা ঘটনার ‘মাস্টার মাইন্ড’ বলেছিলেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার পাল্টা শান্তনুকে এক হাত নিতে দেখা যায় কুন্তলকেও।
শুক্রবার আদালতের বাইরে কুন্তল জানান, ‘অপ্রাসঙ্গিক, কাল্পনিক কথাবার্তার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।’ একইসঙ্গে কুন্তল ঘোষের বক্তব্য, সংবাদমাধ্যমে যা বলা হচ্ছে তা আগে একটু যাচাই করে দেখা হোক। তিনি গোয়ায় হোটেল, ত্রিপুরায় চা বাগান সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, এসব যা বলা হচ্ছে তার ঠিকানাগুলো দিতে। একইসঙ্গে তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের বিষয়েও এদিন মুখ খোলেন কুন্তল। বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নেব।’
এদিকে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, কুন্তল, শান্তনু দু’জনই হুগলি জেলার তৃণমূল যুবনেতা ছিলেন। দু’জনই যখন ‘ফুল ফর্মে’, দাপটও চরমে ছিল বলে অভিযোগ। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাঁদের একসঙ্গে দেখা যেত বলেও অভিযোগ। কিন্তু ইডির হাতে শান্তনু গ্রেফতার হওয়ার পরই তিনি যাবতীয় দায় কুন্তলের ঘাড়েই ঠেলতে চেয়েছেন। তবে নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষই যে টাকা নিয়েছিলেন, সে কথা আগেই জানিয়েছিলেন তাপস মণ্ডল। এই প্রসঙ্গে এও জানান, ১৯ কোটিরও বেশি অঙ্কের টাকা কুন্তল নিয়েছিলেন। ৩২৫ জন ছাত্রর থেকে সেই টাকা নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি তাপসের। তাপসবাবু এও জানান, কুন্তল নিজেও নাকি কেন্দ্রীয় সংস্থার জেরার মুখে সে কথা স্বীকার করেছে। জানা যাচ্ছে, ১৯ কোটি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন কুন্তল। কোন পদে নিয়োগের জন্য কত টাকা দিয়েছিলেন তাও জানান তাপস। ওই ১৯ কোটি ২ লাখ ১০ হাজার টাকার মধ্যে কেবল প্রাথমিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্যই ১০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা কুন্তলকে দিয়েছিলেন তাপসবাবু। আপার প্রাইমারিতে নিয়োগের জন্য দিয়েছিলেন ৩ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া ৫ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষায় পাশ করানো ও নিয়োগের জন্য। তার মধ্যে কেবল ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা কুন্তলকে দেওয়া হয়েছিল শুধু টেটে পাশ করানোর জন্য।
শুদু তাই নয়, তাপস মণ্ডল প্রথম যেদিন এই ১৯ কোটির তথ্য জানিয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমের সামনে, সেদিনই তিনি বলেছিলেন এখানে প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি সহ আরও কিছু ক্ষেত্রের টাকা রয়েছে। যদিও পরবর্তী সময়ে এমন বিপুল অঙ্কের টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করতেও দেখা যায় কুন্তল ঘোষকে। তবে তাপস মণ্ডলের সঙ্গে যে তাঁর পরিচয় রয়েছে তা স্বীকার করে নেন। পরে অবশ্য তাপস মণ্ডল ও কুন্তল ঘোষ উভয়েই গ্রেপ্তার হন। তাঁদের জেরা করে আরও নিত্য নতুন তথ্য সামনে আসছে।