ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার সপ্তাহে চারদিন কাজ আর তিনদিন ছুটির নিয়মটি কার্যকর করার জন্য নতুন শ্রম কোড তৈরি করেছে। যদিও এখনও এই নিয়ম কার্যকর হয়নি। তবে ভারতের মতো দেশে কি এমন নিয়ম চালু হওয়া সত্যি সম্ভব কি না তা নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। দিকে ভারতে না হলেও ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, আমেরিকা সহ একাধিক দেশে কিন্তু এই নিয়ম চালু করার ট্রায়াল শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ, ২০২১ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৫৯ শতাংশ ভারতীয় কর্মী কর্মক্ষেত্রে খুশি নন এবং তাদের ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনের ভারসাম্য ঠিক নেই। গত জুন মাসে ব্রিটেনেও সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে তিন দিন ছুটি পাওয়ায় প্রায় ৬৩ শতাংশ মানুষের কাজের প্রতিভা যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনই এর পাশাপাশি আবার ৭৮ শতাংশ কর্মী বেশ চাপমুক্ত হয়ে কাজ করতে পেরেছেন বলেও সমীক্ষায় ধরে পড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল ব্রিটেন কিংবা আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কর্মপদ্ধতিতে বিস্তর পার্থক্য। শুধু তাই নয়, ভারতের মতো দেশে বিভিন্ন ধরনের পেশার মানুষের কাজের যেমন বৈষম্য রয়েছে ঠিক তেমনই তেমনই আর্থ-সামাজিক দিক বিচার করেও এদেশের বহু মানুষের সপ্তাহে তিনদিন ছুটি নেওয়া সম্ভব কিনা তা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট সংশয়। ফলে এদেশে এই নীতি চালু করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে আইটি সেক্টরে যআঁরা কাজ করেন তাঁদের বক্তব্য, সপ্তাহে ৪ দিন কাজ করলে হয়তো ব্যক্তিগত জীবনে বেশি সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু বেশিরভাগ কোম্পানির যেখানে ৯ ঘণ্টা কাজের নিয়ম রয়েছে, সেখানে সপ্তাহে মাত্র ৪ দিন অর্থাৎ ৩৬ ঘণ্টায় সেই একই পরিমাণ কাজের চাপ নিতে হবে। ফলে কাজের চাপ আরও বাড়ার সম্ভাবনাই থেকে যাচ্ছে। এরই পাশাপাশি অপর এক অংশ জানাচ্ছেন, ‘চারদিন কাজ করলে কাজের মান আরও ভালো হবে। এক নাগাড়ে কাজ করার একঘেয়েমিও থাকবে না। চারদিন বেশি কাজের চাপ নিয়েও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর বেশি সময় পাওয়ায় কর্মীদের মানসিক শান্তিও বজায় থাকবে।’
এই প্রসঙ্গে মনোবিদদেরও এক একজনের এক এক মত। অনেকের ধারনা,বর্তমানে অনেক পেশার কাজেই মনের উপর চাপ পড়তে দেখা যাচ্ছে। তবে সকলেরই কাজের চাপ সমান রয়েছে এমন নয়। কিছু পেশার মানুষ কিন্তু কর্মক্ষেত্র সামলিয়ে ব্যক্তিগত জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগের সময় বের করতে পারেন। তাই তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম তাৎপর্য্যপূর্ণ নাও হতে পারে। তবে যাঁরা দিনে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা কাজ করছেন তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রাখতে পারছেন না। বাড়তি সময় পেলে অবশ্যই তা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে। তাই কাজের ধরন অনুযায়ী এমন নিয়ম চালু হলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে বলেই পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।