পানিহাটির তৃণমূল কাউন্সিলর খুনে তিন লক্ষ টাকার সুপারি! এখনও স্পষ্ট নয় মোটিভ

ব্যারাকপুর: গত রবিবার নিজের এলাকাতেই খুব কাছ থেকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল পানিহাটি পুরসভার নব নির্বাচিত কাউন্সিলর অনুপম দত্ত ওরফে ধলুকে। সেই খুনের ঘটনায় ক্রমশই কাটছে জট। ঘটনার দিন রাতে হোগলার যে জঙ্গল থেকে খুনে অভিযুক্ত শুটার ধরা পড়েছিল, বুধবার সেখানেই ধৃত অমিত পণ্ডিতকে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ হয়। তবে এখনও পুলিশ খুনের মোটিভের এর বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে অনুমপম খুনে অভিযুক্ত শুটার অমিত পণ্ডিত ও সঞ্জীব পণ্ডিত ওরফে বাপি। জানা গিয়েছে, পানিহাটি পুরসভার ঠিকাদার আগরপাড়ার বাসি¨া সঞ্জীব পণ্ডিত ও অমিত আত্মীয়। নদিয়ার হরিণঘাটা থানার মোল্লাবেলিয়ার বাসিন্দা অমিত।
তদন্তে উঠে এসেছে, ঠিকাদার সঞ্জীব অনুপম দত্তকে খুন করার জন্য হরিণঘাটার মোল্লাবেলিয়ার বাসিন্দা জিয়ারুল মণ্ডলকে চার লক্ষ টাকা সুপারি দিয়েছিল। কিন্তু জিয়ারুল কাজ হাসিল করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তারপরেও টাকা ফেরত দিতে চাইছিল না। সূত্র বলছে, খুনের সুপারি দেওয়ার টাকা ফেরত না পেয়ে ঠিকাদার সঞ্জীব তার আত্মীয় অমিতকে জানায়। অভিযোগ, সেই টাকা হাতাতেই ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর মোল্লাবেলিয়ায় জিয়ারুলকে খুনের ছক কষা হয়। এ কাজের দায়িত্ব পড়ে অমিতের ওপর। কিন্তু মাথায় গুলি করলেও বরাতজোড়ে বেঁচে যায় ‘সুপারি কিলার’ জিয়ারুল। সেই ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছিল অমিত। এরপর সঞ্জীব তার মাসতুতো ভাই অমিতকে ফের ডাকে। কাউন্সিলরকে খুন করতে তিন লক্ষ টাকা সুপারি দেয়। অগ্রিম এক লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল অমিতকে। অনুপমকে খুন করার পর শুটার অমিত জামা প্যান্ট পাল্টে হোগলা বনে লুকিয়েছিল। সেখান থেকেই ধরা পড়ে সে।
বুধবার সকালে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা টিম ও খড়দা থানার পুলিশ ধৃত অমিতকে ওই হোগলা জঙ্গলে এনে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানো হয়। অনুপম খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রও ওই জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সূত্রের খবর, জিয়ারুল মণ্ডলকে গুলি কার হয়েছিল যে অস্ত্র দিয়ে, সেটা দিয়েই অনুপমকে খুন করে অমিত। আরও জানা গিয়েছে, অমিত যেহেতু সঞ্জীবের মাসির ছেলে, তাই আগরপাড়ায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল অমিতের। তাছাড়া অনুপম দত্তকে অমিত চিনত।
বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা জানান, পানিহাটি তৃণমূল কাউন্সিলর খুনের তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে। ইতিমধ্যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হরিণঘাটার ঘটনার সঙ্গে পানিহাটির ঘটনার লিংক পাওয়া গিয়েছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এই খুনের ঘটনায় দু’জনের বেশি ছিল। যদিও কী কারণে খুন, তা স্পষ্ট করে কিছুই জানাতে চাননি পুলিশ কমিশনার। তাঁর অনুমান, পুরানো কোনও ঘটনার জেরেই এই খুন। তিনি জানান, ২০২০ সালের মে মাসে অনুপমের সঙ্গে সঞ্জীবের ঝামেলা হয়েছিল। তখন দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। তার জেরেই খুন কিনা খতিয়ে দেখা হবে।
ধৃত সঞ্জীব পণ্ডিতকে এদিন ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে, বিচারক ধৃতকে ১২ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 4 =