অন্ধ্রপ্রদেশে আটকে পড়া ৬ পরিযায়ী শ্রমিককে বাড়ি ফেরাল সিটু

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: অন্ধ্রপ্রদেশে একটি মাছের খামারে আটকে পড়ার দাবি, রাজ্যের ৬ পরিযায়ী শ্রমিককে উদ্ধার করে তাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে দিল বাম শ্রমিক সংগঠন সিটু। গত বুধবার অন্ধ্রপ্রদেশের লেবার কমিশন ও পুলিশের সহযোগিতায় ওই ৬ শ্রমিককে পেড্ডাপুড্ডি এলাকার বেসরকারি মাছের খামার থেকে উদ্ধার করে এ রাজ্যের ট্রেনে চাপিয়ে দেয় অন্ধ্রপ্রদেশের সিটু নেতৃত্ব। বুধবার সন্ধ্যায় ওই ৬ পরিযায়ী শ্রমিককে বাঁকুড়া স্টেশনে অভ্যর্থনা জানিয়ে তাঁদের বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করে বাঁকুড়া জেলা সিটু নেতৃত্ব।

জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ার শালতোড়া থানার গোগড়া ও পার্শ্ববর্তী হরিপুর গ্রামের ৬ শ্রমিক বেশ কিছুদিন আগে কাজের খোঁজে এক দালালের মাধ্যমে অন্ধ্রপ্রদেশে যান । মাছের খামারে মাথাপিছু মাসিক ১৫ হাজার টাকা মজুরি দেওয়ার লোভ দেখানো হলেও পেড্ডাপুড্ডিতে একটি মাছের খামারে পৌঁছনোর পর এই শ্রমিকরা জানতে পারেন ১৫ হাজার নয়, তাঁদের মাথাপিছু মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে।

প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরেও ওই ৬ শ্রমিক স্থানীয় একটি বেসরকারি মাছের খামারে কাজে যোগ দেন। এরপর থেকেই ওই শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, ক্রীতদাসের মতো সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করানো হত তাঁদের। বিশ্রাম চাইলেই মিলত ধমক। খাবার দেওয়া হত আধপেটা। বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে শ্রমিকদের কারও কারও মোবাইলও কেড়ে নেওয়া হয়। এভাবে আটকে পড়ার খবর কোনও ভাবে টেলিফোনে শ্রমিকরা তাঁদের পরিবারের কাছে জানায়।

দিশেহারা পরিবার এই খবর পেয়ে প্রথমে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কাছে ছুটে যায়। তৃণমূল নেতারা বিষয়টি থানায় জানানোর পরামর্শ দিয়ে দায় সারেন বলে অভিযোগ।
আরও অভিযোগ, পরিবারগুলি থানায় হাজির হলে অভিযোগ নিয়ে শুধুমাত্র তাদের আশ্বাস দিয়েই ক্ষান্ত থাকে পুলিশ। এরপর পরিবারগুলি বাম শ্রমিক সংগঠন সিটুর বাঁকুড়া জেলা নেতৃত্বের কাছে হাজির হলে সিটু নেতৃত্ব গোটা বিষয়টি জানায় অন্ধ্রপ্রদেশ সিটু নেতৃত্বকে। অন্ধ্রপ্রদেশ সিটু নেতৃত্ব স্থানীয় লেবার কমিশনে অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ ও লেবার কমিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে হানা দেয় ওই মাছের খামারে। মূলত তাঁদের উদ্যোগেই বকেয়া বেতন সহ ৬ পরিযায়ী শ্রমিককে উদ্ধার করে এ রাজ্যের ট্রেনে তুলে দেয় অন্ধ্রপ্রদেশ সিটু নেতৃত্ব।

ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে আটকে পড়ার পর এভাবে নিজের বাড়িতে ফিরতে পেরে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি পরিযায়ী শ্রমিকরা। সিটু নেতৃত্বের দাবি, এ রাজ্যে কাজ নেই। তাই দলে দলে মানুষ ভিনরাজ্যে কাজের খোঁজে যাচ্ছেন। সেই পরিযায়ী শ্রমিকরা বিপদে পড়লে তাঁদের সাহায্য করা তো দূরের কথা, পরিযায়ী শ্রমিকদের সঠিক কোনও তথ্যই নেই পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × four =