পুরসভার বাজেট পেশ করার সময় কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, জোর দেওয়া হবে কর নেওয়ার ক্ষেত্রে। কারণ, বেশ কিছু ক্ষেত্রে কর যে ঠিমতো জমা পড়ছে না কলকাতা পুরসভার তহবিলে এমন খবর ছিলই। এদিকে কলকাতা পুরসভায় নতুন বোর্ড গঠন হওয়ার পর আয়ের পরিমাণ বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়। পাশাপাশি, রেজিস্ট্রেশন এবং মিউটেশন থেকে আয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প তৈরি করা হয়। একদিকে যেমন কর বাবদ প্রাপ্ত অর্থের দিকে নজর দেওয়া হয় ঠিক তেমনই নতুন সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন, মিউটেশন ফি আদায়ের ওপর-ও জোর দেয় কলকাতা পুরসভা। তবে এবার বাজেট পেশের পই ৫২ হাজার নতুন করদাতা তৈরি হয়েছে কলকাতা পুরসভার, এমন একটা ছবি সামনে এল মঙ্গলবার। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, গত বছর পর্যন্ত কলকাতায় করদাতার সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৭০। গত জানুয়ারি মাসেই সেটা বেড়ে হয় ৯ লাখ ১৪ হাজার। চলতি মাসে সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ২২ হাজারে। স্বাভাবিকভাবেই, নতুন কর দাতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরসভার আয়ের উৎস যে আরও বৃদ্ধি পেল সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।
এদিকে কর আদায় বৃদ্ধি হলে কলকাতার সার্বিক আধুনিকীকরণ এবং উন্নত পরিষেবা এবং সৌন্দর্য্যায়ন বৃদ্ধিতে তা অনেকটাই সাহায্য করবে ধারনা বিশেষজ্ঞদের। এদিকে পুরসভা সূত্রে এ খবরও মিলছে যে, ইতিমধ্যে বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ের জন্য বাড়ি, বাড়ি নোটিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত কয়েক মাসে বকেয়া সম্পত্তি কর অনেকটাই কমানো গিয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। কয়েক মাস আগেও কলকাতা পুরসভায় বকেয়া মিউটেশনের পরিমাণ ছিল সাড়ে চার হাজার, সেই সংখ্যাটা কমে সাতশো হয়েছে বলে খবর। পুরসভার আয় বাড়াতে গত মাসেই ‘কম্বিং’ অপারেশন বা বিশেষ অভিযানে নামে কলকাতা পুরসভা।
তবে কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, কলকাতা শহরে এমন অনেক জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ও পুকুর রয়েছে, যেগুলি এখনও পুরকরের আওতায় আসেনি। সেগুলিকে খুঁজে বের করতেই কম্বিং অপারেশন শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন পুর-কমিশনার বিনোদ কুমার। এ রকম কোনও সম্পত্তির হদিশ মিললেই মালিকের কাছ থেকে সম্পত্তিকর আদায়ে আইনি পদক্ষেপ করতে বলা হয়। পুর কর্তারা জানান, অনেক জায়গাতেই কর ফাঁকি দিতে জমি মালিকরা মিউটেশন করান না। অনেক জায়গায় পুরনো বাড়ি ভেঙে বিল্ডিং প্ল্যান ছাড়াই ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে। সেইসব জায়গায় বছরের পর বছর লোকজন বসবাস করছেন। সিংহভাগ বেআইনি ফ্ল্যাটের মালিকই পুরকর দেন না। বেহালা, যাদবপুর, ঠাকুরপুকুর, টালিগঞ্জ, বেলেঘাটা, পার্ক সার্কাস, গার্ডেনরিচ-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের বহু বেআইনি ফ্ল্যাট রয়েছে। কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে সেগুলি চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। সম্পত্তি কর আদায়ে আরও কঠোর হতে চলেছে কলকাতা পুরসভা।