সমকামিতার নেশায় দু’জনেই আসক্ত। একজন নাবালিকা, অপরজন অষ্টাদশী তরুণী। দীর্ঘদিন ধরেই ফেসবুকের মাধ্যমে আলাপের পর ভালবাসা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে দু’জনের মধ্যে। এমনকী, শিলিগুড়ি এবং কাশ্মীরে পর্যন্ত বাড়ির লোকেদের না জানিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল ওরা। কিন্তু এমন সমকামী সম্পর্ক নারাজ দুই পরিবার। যার কারণে পুরাতন মালদা থানার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিমল দাস কলোনী এলাকায় ওই তরুণীকে হাতেনাতে ধরে খুঁটিতে বেঁধে মারধর করেছিল বেশ কিছু মানুষ বলে অভিযোগ। সোমবারের এই ঘটনার পর আক্রান্ত ওই তরুণীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাহাপুর এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যাদের মধ্যে ওই তরুণীর নাবালিকা প্রেমিকার এক মামা রয়েছে। মঙ্গলবার ধৃত তিনজনকেই আদালতে জামিন অযোগ্য ধারায় পেশ করেছে পুরাতন মালদা থানার পুলিশ। আর এই ঘটনাকে ঘিরে পুরাতন মালদা থানার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিমল দাস কলোনী এলাকায় চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ধৃত ওই নাবালিকার মামা এদিন আদালতে যাওয়ার পথে ক্যামেরার সামনে জানিয়েছেন, তার ভাগ্নীর বয়স মাত্র ১৭ বছর। ভাগ্নীর বাড়ি হবিবপুর থানার বকশিনগর এলাকায়। কয়েকদিন আগেই তার ভাগ্নী সাহাপুরে ঘুরতে এসেছিল। সেই সময় অমৃতি এলাকার এক তরুণী ছেলে সেজে মামার বাড়ি থেকেই ভাগ্নীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখনই আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু ওকে মারধর করা হয়নি। এরপর ওই মেয়েটিকে পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে যাই। এরপর আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে যাকে ঘিরে এত ঘটনা সেই নাবালিকার সাফ কথা, আমাদের দেশে সমকামিতা বৈধ। কাজেই এই ভালোবাসায় কোনো রকমভাবে পরিবার আটকে রাখতে পারবে না। আর এক বছর অপেক্ষা করতে বলেছি। সামনে বছর আমি ১৮ পেরিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাব। তখন দু’জনেই পালিয়ে বিয়ে করব। ওই নাবালিকার এমন কথা শুনে রীতিমতো হতবাক হয়েছে পুলিশ ও পরিবারের লোকেরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইংরেজবাজার থানার অমৃতি গ্রাম পঞ্চায়েতের বলাতুলি এলাকার অষ্টাদশী তরুণীর সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ হয় হবিবপুরের ১৭ বছর বয়সি ওই নাবালিকার। ওই নাবালিকার মামার বাড়ি পুরাতন মালদা থানা সাহাপুর এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরে দুই জনের মধ্যে সমকামিতার সম্পর্ক রয়েছে। এর আগে বাড়ির লোকেদের অলক্ষে শিলিগুড়ি পালিয়ে গিয়েছিল ওই দুইজন। পুলিশি সহযোগিতা নিয়ে পরিবারের লোকেরা ওই দু’জনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এমনকী মাস দুয়েক আগেও কাশ্মীর পালিয়ে গিয়েছিল ওই দুইজন। এদের মধ্যে সমকামী প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এরা একে অপরকে ভুলতে চাইছে না। সোমবার ওই নাবালিকাকে প্রেমিকার সঙ্গেই দেখা করতে আসে অমৃতির অষ্টাদশী তরুণী। মাথায় টুপি পড়ে ছেলের বেশে ওই নাবালিকার বাড়িতে আসতেই ধরা পড়ে যায় তরুণী। তারপরে ওই তরুণীকে গণপিটুনি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপর পুরাতন মালদা থানার পুলিশ এসে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় বাপি হালদার, রঞ্জন রায় এবং বিপ্লব দাস নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বাপি হালদার হচ্ছে ওই নাবালিকার সম্পর্কে মামা। পাশাপাশি পুরো ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুরাতন মালদা থানার পুলিশ।