পরিচয়ের সুযোগ নিয়ে বাড়িতে অতিথি হয়ে এসে ও থেকে কৌশলে চুরির অভিযোগ। সোনার গয়না থেকে টাকা। ঘটনার মাস খানেক পর পুলিশের জালে মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা মা ও মেয়ে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মুম্বই বেড়াতে গিয়েছিলেন গড়পার রোডের এক দম্পতি। সেখানে তাঁদের সঙ্গে আলাপ হয় মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা পাপিয়া এবং অনুষ্কা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আলাপ গড়ায় বন্ধুত্বে। ভালো পরিচয় সূত্রেই কলকাতায় এলে গড়পার রোডের দম্পতির বাড়িতে উঠতেন তাঁরা। মার্চ মাসে কলকাতায় আসেন পাপিয়া ও অনুষ্কা। ৯ মার্চ সকালে ফিরেও যান তারা। তারপরে দম্পতি বুঝতে পারেন তাঁদের সাড়ে চার লক্ষ টাকার সোনার গয়না এবং মোবাইল ফোন উধাও। এমনকী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকেও গায়েব ৭৯ হাজার টাকা। ১৩ মার্চ নারকেলডাঙা থানায় অভিযোগ জানান গড়পার রোডের দম্পতি।
তদন্ত শুরু হতেই ঝুলি থেকে বেড়াল বের হয়। চুরির ঘটনার তদন্তে নামেন নারকেলডাঙা থানার আধিকারিকেরা। দুই মহিলার মোবাইল ফোন সুইচড অফ পায় পুলিশ। তবে পাপিয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বেশ কিছু তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি নম্বর পাকাপাকিভাবে হাতে আসে তদন্তকারীদের। অভিযুক্ত অনলাইনে কেনাকাটা করতে এই নম্বর ব্যবহার যে করেন তিনি তা বোঝা যায়। জানা যায়, এই অ্যাকাউন্টেই অভিযোগকারিণীর অ্যাকাউন্ট থেকে ৭৯ হাজার টাকা চালান করা হয়েছে। পাপিয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করে এও জানা যায়, অন্য আর একটি অ্যাকাউন্ট থেকে এই অ্যাকাউন্টে চোরাই গয়না লেনদেনের টাকাও জমা পড়েছে।
কিন্তু কীভাবে হল এই জালিয়াতি? তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, কলকাতার ওই দম্পতিকে নেটব্যাঙ্কিং-এর পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন পাপিয়া ও অনুষ্কারা। যার ফলে দম্পতির লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড জানতেন পাপিয়া ও অনুষ্কা। সেই সব কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত সন্তর্পণে এই জালিয়াতি করা হয়েছে বলে পুলিশ একপ্রকার নিশ্চিত হয়। অবশেষে মা-মেয়ের সন্ধান পাওয়া যায় মুম্বই থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে মহারাষ্ট্রের পালঘর শহরের একটি আবাসিক সোসাইটিতে। সময় নষ্ট না করে সার্জেন্ট সৈয়দ কাসিম রাজা, সাব-ইন্সপেক্টর গৌরব ভট্টাচার্য, এবং কনস্টেবল মৌমিতা সিংহ ও সুশীল রায় রওনা দেন পালঘরের উদ্দেশে। আবাসিক সোসাইটিতে হানা দিয়ে ২৬ মার্চ তাঁরা গ্রেপ্তার করেন পাপিয়া ও অনুষ্কাকে। দু’জনের কাছ থেকে উদ্ধার হয় কিছু খালি গয়নার বাক্স এবং চোরাই মোবাইল ফোন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে কিছু গয়না তাঁরা হুগলির এক ক্রেতাকে বিক্রি করেছেন। অভিযুক্তের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রিষড়ার এক গয়নার দোকান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কিছু গয়না এবং ২১ গ্রামের বেশি গলানো সোনা। এছাড়াও উদ্ধার করা গিয়েছে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া ৭৯ হাজার টাকাও। এদিকে অভিযুক্ত মা-মেয়েকে গ্রেপ্তার করেন নারকেলডাঙার পুলিশ আধিকারিকরা। এরপর ট্রানজিট রিমান্ডে দু’জনকে কলকাতায় আনা হয়। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।