অশোক সেনগুপ্ত
বইমেলা দেখল এক অন্য ছবি। দৃষ্টিহীন একদল পড়ুয়াকে বইমেলার স্বাদ পাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন চক্ষুষ্মান কিছু সমাজকর্মী। জীবনে এই প্রথম মেলায় বইয়ের স্পর্শ পেয়ে আপ্লুত সফরসঙ্গীরা।
আমতার রামসদয় কলেজের সমাজতত্বের শিক্ষিকা অস্মিতা সমমনস্ক আরও তিনজনের সঙ্গে কয়েক মাস আগে তৈরি করেছেন ‘দৃষ্টিকোণ’। বাকি তিন জন হলেন শুচিস্মিতা, মনসিজ আর মনজিৎ। প্রথম জন এখনও ছাত্রী। বাকি দু’জনের একজন ১০০ শতাংশ দৃষ্টিহীন, অপরজন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট।
বেলা তিনটে থেকে ১০ জন দৃষ্টিহীন ঘুরলেন মেলাপ্রাঙ্গণ। ওঁদের অনেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া। সঙ্গে ছিলেন ব্লাইন্ড পার্সনস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সৈকত করও। আর ছিলেন জনা পনেরো চক্ষুষ্মান। ওঁদের মুখে ছিল ’আই শ্যাল ওভারকাম‘, ‘সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজের অপমান‘, ‘বিপদে মোড়ে রক্ষা কর‘— এরকম নানা গান। বুকে ঝোলানো প্ল্যাকার্ডেও নানা আবেদন। যেমন— ‘অন্ধকারের ভাষা শেখো, দৃষ্টিহীনকে সঙ্গে রেখো’, ‘জ্ঞানের আলো জ্বালব ভাই, আমরাও বই পড়তে চাই‘ প্রভৃতি।
সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বইমেলার ঘ্রাণ নিয়ে ওঁরা খোলা আকাশের নিচে বসে চা পান করলেন। এর পর ‘দৃষ্টিকোন’-এর উদ্যোক্তারা দৃষ্টিহীনদের প্রত্যেককে বাড়ি পৌঁছিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। শুধুমাত্র দর্শন নয়, অনুভবও।
‘দৃষ্টিকোণ’-এর কথায়‘ ‘হাতের কাছে নতুন-পুরোনো বই, ম্যাগাজিন মায় খবরের কাগজটা পেলেও আমরা পাতা উল্টে দেখতে থাকি, তা সে আমরা পড়ি বা না পড়ি। কিন্তু যেখানে ওদের কাছে পড়ার উপযোগী নিজস্ব পাঠ্যপুস্তকেরই নিতান্ত অভাব, সেখানে মনের খোরাকের জন্য গল্প-প্রবন্ধ-কবিতা র বইয়ের কথা ভাবাটাও বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে। ওঁরা,মানে আমাদের দৃষ্টিহীন সহনাগরিকরা। তাই আমরা,মানে দৃষ্টিকোণ উদ্যোগ নিয়েছে ওঁদের জন্য পাঠক,অনুলেখক এবং সহযোগী হিসেবে কাজ করার। ইতিমধ্যে অনেকে তাদের সদিচ্ছার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু প্রয়োজন আরও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সহনাগরিকের। তাই ‘দৃষ্টিকোণ’ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন এবং সহানুভূতিশীল সহনাগরিকদের সঙ্গে জনসংযোগের উদ্দেশ্যে এদিনের উদ্যোগ।
পড়ার অধিকার,শিক্ষার অধিকার হোক সবার।আসুন, আমরা সবাই মিলে আগামীতে একটা সমন্বয়ী সমাজ গড়ে তুলি! দেখা হোক, কথা হোক, জনসংযোগ বাড়ুক।“