ঋদ্ধিমান সাহা বনাম সিএবি বিতর্ক মহানাটকীয় মোড় নিল মঙ্গলবার। যখন ‘অপমানিত’ ভারতীয় টেস্ট উইকেটকিপার সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়াকে ফোন করে বলে দিলেন যে, তিনি আর বাংলার হয়ে খেলতে চান না! বরং তিনি ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ চান সিএবির থেকে। বাংলার হয়ে খেলার আর তাঁর কোনও ইচ্ছে নেই!
এই পরিস্থিতিতে ঋদ্ধিমান সাহা এখন বাংলা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। তিনি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের (সিএবি) কাছ থেকে শংসাপত্র (এনওসি) চেয়েছেন। সিএবি সভাপরি অভিষেক ডালমিয়ার সঙ্গে ফোনে কথোপকথন হয়েছে ঋদ্ধির। ৩৭ বছর বয়সী ঋদ্ধি এক সিএবি কর্তার মন্তব্যে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। ঋদ্ধির দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিএবির যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাস। এছাড়াও নকআউট ম্যাচের জন্য দল ঘোষণার আগে ঋদ্ধির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। সূত্রের খবর, ঋদ্ধি আর বাংলার হয়ে খেলতে আগ্রহী নন। তিনি এনওসি চেয়েছেন কারণ তিনি ওই সিএবি কর্তার মন্তব্যে অপমানিত বোধ করছেন। ওই কর্তা প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে ঋদ্ধি আর বাংলার হয়ে খেলবেন না।
সিএবি আগাম ঠিক করেছিল যে, ঋদ্ধিমান ও শামি- দু’জনকেই নকআউট পর্বে খেলানোর চেষ্টা করা হবে। কর্তারা এটাও বলেছিলেন যে, দু’জনকেই ফোন করা হবে। কিন্তু শামিকে ফোন করে কথা বলা হলেও ঋদ্ধিমানের সঙ্গে কোনও কথা বলা হয়নি। কথা না বলেই ঋদ্ধিকে টিমে রেখে দেওয়া হয়। যা নিয়ে সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া দল নির্বাচনী বৈঠকের রাতে বলে দেন, শামির ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার আছে বলে তাঁর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। আর শামি বাদে কারও সঙ্গেই কথা বলা হয়নি। এটাও সিএবি প্রেসিডেন্ট বলেন যে, রনজি ট্রফির গ্রুপ পর্বের সময় ঋদ্ধিমান বলেছিলেন যে, ব্যক্তিগত কারণে তাঁর পক্ষে খেলা সম্ভব নয়। কিন্তু নকআউটে খেলবেন না, সেটা বলেননি। তাই কোয়ার্টার ফাইনালের টিমে রাখা হয়েছে।
ঋদ্ধিমান যা ভালভাবে নেননি। ঋদ্ধির ঘনিষ্ঠমহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মঙ্গলবার দুপুরে সিএবি প্রেসিডেন্টকে ফোন করে তিনি বলে দেন, ১৫ বছর বাংলার হয়ে খেলার পর তাঁকে বাংলার প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে কথা শুনতে হয়েছে। সিএবি’র তরফ থেকেই সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাই পুরো ব্যাপারটা নিয়ে সিএবি কী ভাবছে? এটাও শোনা গেল, ঋদ্ধি জানতে চান, তাঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সংশ্লিষ্ট সেই কর্তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ সিএবি করছে কি না? উত্তরে সিএবি প্রেসিডেন্ট নাকি বলে দেন, এ ব্যাপারে তিনি কীভাবে পদক্ষেপ করবেন? এরপরই ঋদ্ধি জানিয়ে দেন তিনি এতটাই অপমানিত যে আর বাংলার হয়ে খেলতে চান না। তিনি ‘এনওসি’ চান।
আইপিএল টিম গুজরাট টাইটান্সের সঙ্গে এই মুহূর্তে ঋদ্ধি চুক্তিবদ্ধ থাকায় তাঁর পক্ষে কথা বলা সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁর স্ত্রী রোমি সাহা বলেন, “ঋদ্ধিমানের সঙ্গে পরের পর যা ঘটেছে, সিএবি যা আচরণ করেছে, তাতে ও অপমানিত। সেই কারণেই বাংলার হয়ে আর খেলতে চায় না।” সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া এই প্রসঙ্গে বলেন, “প্লেয়ার আর সংস্থার মধ্যে যে কথাবার্তা হয়, তা কঠোরভাবে দু’পক্ষের মধ্যেই থাকা উচিত। এই সময় আমি কোনও মন্তব্য করব না।”
বাংলা ছেড়ে চলে গেলে ঋদ্ধিমান শেষ পর্যন্ত কোথায় যাবেন, কিছুই ঠিক হয়নি। উত্তর ভবিষ্যতের গর্ভে। তবে এটা ঠিক যে, ঋদ্ধিমান বনাম সিএবি সংঘাত রাতারাতি হয়নি। গত কয়েক মাস ধরে চলছে। দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে ভারতীয় টিম থেকে ‘ব্রাত্য’ হয়ে যাওয়ার পর ঋদ্ধিমান প্রচারমাধ্যমের কাছে বলেছিলেন, গত বছর নভেম্বর মাসে কানপুরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘাড়ের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে তাঁর অপরাজিত ৬১ রানের ইনিংস দেখে স্বয়ং বোর্ড প্রেসিডেন্ট তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপ করেছিলেন। “দাদি বলেছিল, যত দিন দাদি বোর্ড প্রেসিডেন্ট আছে, আমাকে ভাবতে হবে না। বোর্ড প্রেসিডেন্টের থেকে এমন বার্তা পাওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। বুঝতে পারলাম না, গত কয়েক মাসের মধ্যে এত দ্রুত সব কিছু কী করে পাল্টে গেল?,” তখন বলেছিলেন ঋদ্ধিমান। যা সিএবি তখন ভালভাবে নেয়নি।
সাংবাদিক সম্মেলন করে সিএবি সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলে দেন, বোর্ড প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ব্যক্তিগত কথাবার্তা মিডিয়ায় বলে ঠিক করেননি ঋদ্ধি। কয়েকদিন পর সিএবি যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাস আবার ঋদ্ধির বাংলার প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেন। এবং বঙ্গসন্তানের অভিমানের আগুনে শেষ ঘৃতাহুতি ঘটে সিএবি তাঁকে ফোন না করে রনজি কোয়ার্টারের টিমে রেখে দেওয়ায়।