‘আগমন্ডা’ দিয়ে দুর্গার আরাধনা দত্ত চৌধুরীদের বাড়ির পুজোয়

হাওড়া জেলার সুপ্রাচীন বনেদি বাড়ির পুজোর ইতিহাস ঘাঁটলে আন্দুল মৌড়ি এলাকার দত্ত চৌধুরী বাড়ির নাম উঠে আসে।বাড়ির ভিতরে চোখে পড়ে অতীতের গৌরবময় ঐতিহ্য ও সাবেকিয়ানা। যার ইতিহাস বাড়ির ঠাকুরদালানের সামনে ব্যক্ত করছে একটি বোর্ড। তাতে লিখিত রয়েছে,এই পুজো রামশরণ দত্ত প্রবর্তন করেন ১০১৬ বঙ্গাধে (১৬০৯ খ্রিষ্টাধ)। যদিও ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে জানা যায় পুজোর ইতিহাস আরও পুরনো। সেই ইতিহাস বলছে এই পুজোর শুরু ১৫৬৮ থেকে ১৫৭০ খ্রিস্টাধের মধ্যে। যদিও পুজো শুরুর প্রকৃত বছর তারিখ নিয়ে বংশধরদের মধ্যে দ্বিমত থাকলেও দত্তচৌধুরী বাড়ির পুজোর প্রাচীনত্ব নিয়ে কারও দ্বিমত নেই।
অতীতের সরণি বেয়ে গেলে দেখা যায় ১৬৩০ সাল নাগাদ ইঁট আর খড়ের আটচালা মন্দিরের জায়গায় অস্থায়ী আটচালা মন্দির থেকে পাকা ঠাকুরদালান তৈরি হয়। এরপর বয়সের ভারে নুজ্য সেই ঠাকুরদালান ১৯৩০-এ পুনর্র্নিমাণ করে আজকের ঠাকুরদালানটি দাঁড়িয়ে আছে । ঠাকুরদালানের সঙ্গে লাগোয়া পরপর চারটি শিবমন্দির। যার মধ্যে দু’টি আটচালা শৈলীতে নির্মিত।
শাক্ত ও বৈষ্ণব দুই মতের সংমিশ্রণই হল এই দত্তচৌধুরী বাড়ির পুজোর বৈশিষ্ট্য। এই বাড়ির মাতৃ আরাধনাতে একদিকে যেমন বৃহৎ নন্দীকেশ্বর পুরাণ অনুসরণ করা হয়, ঠিক একইভাবে বৈষ্ণব ধারাকেও বংশ পরম্পরাতে নিষ্ঠা সহযোগে পালন করা হয়। শাক্ত মতের নিরীহ পশুবলি না হলেও এখানে ‘শত্রু বলি’ দেওয়া হয়। যা এই পুজোকে অন্যান্য যে কোনো বনেদি বাড়ির পুজার আচার ও সংßৃñতি থেকে ভিন্ন করে তুলেছে। মূলত চালের গুঁড়ো দিয়ে পুতুল গড়ে শত্রু-বিজয়ের প্রতীক রূপে সেই পুতুল বলি দেওয়া হয়।
দত্তচৌধুরী বাড়ির পুজোয় মাকে নিবেদন করা হয় বিশেষভাবে তৈরি মিষ্টি। ক্ষীর ও নারকেলের সঙ্গে চিনি , মেওয়া মিশিয়ে তৈরি হয় ‘ আগমন্ডা’ নামের বিশেষ পদ।
এছাড়া আর নবমীর দিন কুমারী পুজোর পর সম্পন্ন হয় ধূনী পোড়ানো। দশমীর দিনে মাতৃ বরণের পর দুলে সম্প্রদায়ের নারীরা ঠাকুর বরণ করার জন্য তাঁদের পাড়ায় মাকে নিয়ে যান। এরপর ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্রতিমা নিরঞ্জনের প্রস্তুতি শুরু হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + twenty =