বিশ্বজনসংখ্যা পৌঁছল ৮০০ কোটিতে, ভারতের অবদান সর্বাধিক

মঙ্গলবার ৭ বিলিয়নের গণ্ডি পার করে বিশ্বের জনসংখ্যা সংখ্যা ছুঁল ৮ বিলিয়নে। প্রসঙ্গত, ১৯৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ২.৫ বিলিয়নে পৌঁছেছিল। ১৯৮৭ সালে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৫ বিলিয়নে পৌঁছতে লেগেছিল ৩৭ বছর। ১৯৭৪ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা স্পর্শ করে ৪ বিলিয়নে। সেই তুলনায় প্রায় ৪৮ বছর পর মঙ্গলবার বিশ্বের জনসংখ্যা ৮ বিলিয়নের মাইলফলক স্পর্শ করে। মানবোন্নয়নের নিরিখে নিঃসন্দেহে এটা একটা মাইলস্টোন। তবে এরই পাশাপশি উঠে আসছে নানা তথ্য। রাষ্ট্রসংঘের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা পৌছবে ৮৫০ কোটিতে, ২০৫০ সালে জনসংখ্যার পরিমাণ হবে প্রায় ৯৭০ কোটি। আর ২১০০ সালে এই জনসংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে ১০ কোটির গণ্ডি।

শুধু তাই নয়, পৃথিবীতে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে এরই মাঝে পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা একদিনে ন্যূনতম ২০ জন আরও বেড়ে যাবে। তবে এই জনসখ্যা বৃদ্ধিতে এখনই লাগাম টানতে না পারলে, পরিস্থিতি ভয়ানক হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। কয়েকদিন আগে জনসংখ্যার এই বৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কার কথা শুনিয়েছিল রাষ্ট্রসংঘ। এদিকে এই মুহূর্তে জনসংখ্যার বিচারের বিশ্বে প্রথম চিন। এরপরেই আছে ভারত। তবে ২০৫০ সালে এটি পরিবর্তিত হতে পারে জানিয়েছেন রাষ্ট্রসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ। চিনকে  পিছনে ফেলে সবেচেয়ে জনবহুল দেশে পরিণত হতে পারে ভারত।

গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায়, বিশ্বব্যাপী এই জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘের জনসংখ্যা কমিটি। ২০১৯ সালে বিশ্বে গড় আয়ু ছিল ৭২.৮। যা, ১৯৯০ সালের তুলনায় ৯ বছর বেশি। ২০৫০ সালে এই গড় আয়ু ৭৭.২ হবে বলে জানাচ্ছে রাষ্ট্রসংঘের এই কমিটি। পাশাপশি এও বলা হয়েছে, ৬৫ বছরের গড় আয়ুর লোকের সংখ্যার অনুপাত ২০২২ সালে ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০৫০ সালে হবে ১৬ শতাংশ। আমেরিকা ভিত্তিক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের মতে, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা ২০৬৪ সালের মধ্যে হবে সর্বাধিক। তবে কখনও ১০ বিলিয়ন পৌঁছাবে না বলে দাবি করেছে তারা। এরই পাশাপাশি সমীক্ষায় এও জানানো হয়েছে, ২১০০ সালের মধ্যে এই জনসংখ্যা ৮.৮ বিলিয়নে নেমে আসবে।

একদিকে যেমন জনসংখ্যা বিপুল হারে বেড়ে চলেছে অর্থনীতিতে কিন্তু তেমন গতি নেই। সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ক্ষুধার সূচক। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ খাদ্য সংকটে পড়বে পৃথিবী। এখনই রাশ টেনে না ধরলে ভবিষ্যৎ দুনিয়ার সামনে রয়েছে অসীম চ্যালেঞ্জ। তবে বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার খবরের মাঝে লুকিয়ে রয়েছে আরও একটি তথ্য। পরিসংখ্যান বলছে, ৭০০ কোটি থেকে ৮০০ কোটি জনসংখ্যা হতে ১২ বছর লেগেছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৩৭ সালে গিয়ে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৯০০ কোটির সংখ্যা ছোঁবে। অর্থাৎ বর্তমান সময় থেকে ধরলে ১৫ বছরের সময়সীমা। এর অর্থ হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে।

রয়েছে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। আগামী ১৫ বছরে পৃথিবীতে যে ১০০ কোটি জনসংখ্যা বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে, তাতে মাত্র আটটি দেশ অবদান থাকবে। এই তালিকায় রয়েছে, কঙ্গো, মিশর, ইথিওপিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স  এবং তানজানিয়া। পূর্বাভাস অনুযায়ী, যে দেশে মাথাপিছু আয় সর্বনিম্ন, সেই দেশগুলিই আগামী পনেরো বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে চলেছে। আর মাথা পিছু আয় বৃদ্ধির অন্যতম মূল চালিকা শক্তি হল রসদ ও উৎসের অনিয়ন্ত্রিত উৎপাদন এবং ব্যবহার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − one =