রেশম উৎপাদনের প্রধান উপকরণ পোলুপোকা এবং তুঁত চাষ করে নির্ভরশীল হওয়ার পথ দেখাচ্ছেন মালদার কালিয়াচকের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। গোটা দেশজুড়েই রেশম গুটি থেকে উৎপাদিত সুতোর চাহিদা বরাবরই রয়েছে। এই রেশম সুতো থেকেই তৈরি হয় উন্নতমানের পোশাক। আর সেই রেশম শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতেই মালদার কালিয়াচকের বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা নিজেদের বাড়িতেই পোলুপোকা চাষ করে মোটা টাকা উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছেন। একই সঙ্গে পোলু পোকার প্রধান খাদ্য হিসেবে তুঁত গাছের চাষ করেন নিজেদের জমিতে। কেউ কেউ আবার অন্যের জমি লিজ নিয়ে তুঁত চাষ করে থাকেন। বছরে তিন থেকে চার দফায় এই পোলু পোকার চাষ হয়ে থাকে। এক দফায় ৫০ কেজি রেশম গুটি তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় দশ হাজার টাকা। আর সেটি বিক্রি হয় ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। অর্থাৎ লাভের মূল্য ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। এই লাভের পথ দেখেই এখন কালিয়াচকের অনেক গৃহবধূরাও রেশম উৎপাদনের প্রধান উপকরণ পোলু পোকা এবং তুঁত গাছের চাষ শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতারও আবেদন জানিয়েছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।
শুক্রবার কালিয়াচক ১ ব্লকের নওদা যদুপুর এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে পোলুপোকা চাষের তদারকি করেন রাজ্য রেশম বিভাগের সম্প্রসারণ আধিকারিক ঊষা দাস। এদিন বেশ কিছু মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের বাড়িতে গিয়ে পোলু পোকার চাষ সম্পর্কে নানা বিষয়ে সচেতন করেন। খোঁজ নিয়ে দেখেন পোলু পোকা চাষ বাড়িতে রেখে কিভাবে করছেন মহিলারা। ওই আধিকারিক বলেন, পোলু পোকা চাষের ক্ষেত্রে এক ধরনের ওষুধ, কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী দরকার হয়। রাজ্য সরকার সবরকমভাবেই সেগুলি দেওয়ার চেষ্টা করছে। এবং এই চাষকে বাড়ানোর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করছে।
উল্লেখ্য, মালদার রেশন চাষের গড় হিসাবে পরিচিত কালিয়াচক ১, ২ এবং ৩ ব্লক। রাজ্যের সব থেকে বড় রেশন উৎপাদন ব্যবস্থা রয়েছে কালিয়াচকের এই তিনটি ব্লকে। প্রতি বছর কয়েক হাজার মন রেশম গুটি উৎপাদন করে সরবরাহ করে থাকেন চাষিরা। যেখান থেকে রেশম সুতো তৈরি হয়। আর এই রেশম গুটি তৈরি করার ক্ষেত্রে পোলু পোকার চাষ অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ, পোলু পোকার পরিপক্ক অবস্থায় লালা থেকেই তৈরি হয় রেশমের গুটি। আর এই চাষের জন্য তাদের খাদ্য উপকরণ হিসেবে প্রয়োজন হয় তুঁত গাছের। বাড়িতে ডালার মধ্যে পোলু পোকা রেখে এবং তুঁত পাতা দিয়েই অতি সহজে এই চাষ করা সম্ভব।
কালিয়াচক ১ ব্লকের নওদা যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নবীনগর, আলিপুর, আলিনগর, উত্তর দারিয়াপুর, নয়াবস্তি, পাহাড়পাড়া-সহ একাধিক এলাকায় পোলু পোকার চাষ হয়ে থাকে। এছাড়াও কালিয়াচক ১ ব্লকের ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত, কালিয়াচক ২ ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং কালিয়াচক ৩ ব্লকের ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতে রেশম গুটি উৎপাদনের ক্ষেত্রে পোলু পোকার চাষ করে থাকেন চাষিরা।
এদিন নওদা যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আলিপুর গ্রামের পোলু পোকা উৎপাদনকারী মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য জায়েদা বিবি, রীনা বিবি, আসমা বিবিদের বক্তব্য, সংসারের হাল ধরতে এখন পোলু পোকার চাষ নতুনভাবে দিশা দেখিয়েছে। বাড়িতে রেখেই পোলু পোকার চাষ করা সম্ভব। এই চাষের জন্য নিজেরাই অন্তত দেড় বিঘা জমিতে তুঁত গাছের চাষ করে থাকি। যেটা পোলু পোকার অন্যতম খাদ্য। ন্যূনতম কুড়িটি ডলার মধ্যে পোলু পোকা এবং তুঁত পাতা দিয়ে রেশন গুটি লালা উৎপাদন করা হয়। এই কুড়িটি ডালা থেকে ৫০ কেজি রেশম গুটি উৎপাদন হয়ে থাকে। যা তৈরি হতে ২৬ থেকে ২৯ দিন সময় লাগে। সেই পোলু পোকার লালা থেকেই তৈরি হয় রেশম গুটি। নির্দিষ্ট দামের ভিত্তিতে সেগুলো বিক্রি করা হয়। যাতে প্রতি সিজিনে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা লাভ থাকে। এক্ষেত্রে সরকারের কাছে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা।