মহিলাদের গর্ভগৃহে প্রবেশ নিষিদ্ধ খানাকুলের ভট্টাচার্য বাড়ির কালী মন্দিরে

হুগলি জেলার খানাকুলের ভট্টাচার্য বাড়ির ঐতিহ্যবাহি কালীপুজোকে ঘিরে রয়েছে নানা জনশ্রুতি ও ইতিহাস। আর কয়েকদিন পরেই কালীপুজো। ৫০২ বছর ধরে রীতিমেনে পুজোপাঠ হয়ে আসছে খানাকুলের ভট্টাচার্য বাড়ির দক্ষিণা কালীর।

কথিত আছে, ৫০২ বছর আগে খানাকুলের রাধাবল্লভপুরে সন্ধ্যাবেলা একটি মেয়ে কালী মন্দিরে সন্ধ্যা দেখাতে এসে অদৃশ্য হয়ে যায়। চারিদিকে খোঁজাখুঁজি করেও মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়ায় যায়নি। অবশেষে মন্দিরে এসে গ্রামের একজন প্রথম দেখেন মা কালীর মুখ থেকে লাল কাপড়ের টুকরো ঝুলছে। তখন গোটা গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে মন্দিরে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে গ্রামের প্রবীণ পুরোহিত ঠাকুর মায়ের মন্দিরে গিয়ে বুঝতে পারেন। সন্ধ্যা দেখাতে এসে মেয়েটি মন্দিরে অনিয়ম করার জন্য মা কালী তাকে ভক্ষণ করে। এরপর গ্রামের মানুষ ও মায়ের মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতারা সিদ্ধান্ত নেয় এই মাকে বনে রেখে আসা হবে। মন্দিরের পাশে বিশাল কচুবনে মাকে ফেলে আসা হয়। তার কিছুদিন পর খানাকুলের কৃঞ্চ নগরের তপোসী কনাদ স্বপ্না দেশ পান। তিনি মা কালীকে উদ্ধার করে দক্ষিণা কালী রূপে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে রীতি মেনে পুজো শুরু হয়।

এই বিষয়ে ভট্টাচার্য বাড়ির এক সদস্য দীপক ভট্টাচার্য বলেন, এটি রাধাবল্লভপুরে প্রথম জমিদার বংশের লোকেরা পুজো করতেন। তবে বংশপরম্পরায় জানা গেছে, ওই জমিদার বংশের একটি মেয়ে মন্দির থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর মা কালীকে কচু বনে ফেলে দেওয়ায় হয়। আমাদের বংশের তপশ্রী কনাদ মা কালীকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে আবার পুজো শুরু করেন। বর্তমানে মায়ের তিন জায়গায় পুজো হয়। কৃষ্ণনগর, সেকেন্দারপুর ও বসন্তপুরে মা কালীর আরাধনা হয়। পঞ্চমুণ্ডের আসনে বসে মা কালীর পুজো পাঠ হয় এবং সারা বছর পঞ্চমুণ্ডের বেদী আসন গঙ্গার জলে ভিজে থাকে। তাই বংশধরেরা মনে করে এই মায়ের আসনের সঙ্গে মা গঙ্গার যোগাযোগ রয়েছে। অপরদিকে বংশধর সৌরভ ভট্টাচার্য বলেন, পুজোকে ঘিরে নানা স্মিথ রয়েছে। পুজোর সমস্ত কাজ পুরুষরাই করে থাকে। মহিলাদের গর্ভগৃহে প্রবেশ নিষিদ্ধ। সবমিলিয়ে মায়ের পুজোয় যাতে কোনও খুঁত না থাকে সেই বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখেন ভট্টাচার্য পরিবার। আর বৈদিক রীতি মেনে সমস্ত নিয়ম মেনে নিষ্ঠাভরে মা কালীর পুজোর প্রস্তুতি চলছে খানাকুলের ভট্টাচার্য বাড়িতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + twenty =