রামনবমীর মিছিলে অশান্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের রণক্ষেত্র হাওড়া

রাজীব মুখোপাধ্যায়

হাওড়া:  রামনবমীর অশান্তির পরদিন ফের অশান্তি হাওড়ার সন্ধ্যাবাজারে। বাড়িঘর লক্ষ্য করে ইট ছোড়া শুরু হতেই উত্তেজনা ছড়ায়। ভয়ে, আতঙ্কে গুটিয়ে যান সাধারণ মানুষ। বহুতলগুলির কার্যত সিঁটিয়ে ঘরে বসে থাকেন বাসিন্দারা। বাড়ি-ঘরের দরজা দিয়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগ, পুলিশের সামনেই একদল দুষ্কৃতী তাণ্ডব চালালেও তাদের ভূমিকা ছিল নীরব দর্শকের।বৃহস্পতিবার রাম নবমীর মিছিলে বিনা প্ররোচনাতে ইঁট,পাথর ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। যার জেরে সেদিন অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। তারপর বিশাল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন হলেও নতুন করে শুরু হয় অশান্তি।

আর, জন সাধারণ নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব যে পুলিশের, সেই পুলিশকেই কার্যত দেখা যায় দুষ্কৃতীদের ভয়ে পিঠ বাঁচাতে। স্বভাবতই এই ঘটনায় হাওড়া সিটি পুলিশের ভূমিতা প্রশ্নের মুখে। গোটা ঘটনায় তীব্র আতঙ্কে হাওড়ার সন্ধ্যাবাজার লাগোয়া গ্যাঞ্জেস গার্ডেন, পঞ্চশীল ও কুন্দল বাগান মোড় এলাকার আবাসিকরা। বৃহস্পতিবারে যে স্থানে অশান্তি হয় সেখানেই শুক্রবার অশান্তি হয়। বহুতল লক্ষ্য করে ইট ও পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকদের সামনেই এমনটাই ঘটেছে বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা৷

সকাল থেকে পুলিশ পিকেটিংয়ের মধ্যে থমথমে পরিস্থিতি থাকলেও আপাতভাবে শান্তিপূর্ণ এলাকায় ছিল পুরো এলাকা ৷ পুলিশের সামনে কীভাবে এমনটা ঘটল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সন্ধ্যাবাজার এলাকাতে রামনবমীর মিছিলে অশান্তির ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে হাওড়া সিটি পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, শিবপুর, হাওড়া, বি-গার্ডেন-সহ শহরের একাধিক জায়গা থেকে ধৃতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।ধৃতদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সরকারি কর্মীদের বাধা দেওয়া-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।ধৃতদের ২৫ জনকে পুলিশি হেপাজত ও বাকি ২১ জনকে জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। শিবপুর জুড়ে পুলিশের টহলদারি চলছে।

এদিকে পুলিশি টহলদারির মধ্যে শুক্রবার কী করে অশান্তি হয়, সেই প্রশ্ন তুলছে সাধারণ মানুষ। দুদিনের ঘটনায় নিজেদের পিঠ বাঁচাতে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। জানা গিয়েছে, এদিন অশান্তির পর হাওড়া সিটি পুলিশের একটি বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকাতে ঢোকে। যদিও গোটা এলাকায় চাপা উত্তেজনা ও আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে।

যদিও এই ঘটনাতে হাওড়া জেলা প্রশাসন ও হাওড়া সিটি পুলিশকে কার্যত একহাত নেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রামনবমীর মিছিলে যেভাবে হামলা করা হয়েছে সেটা পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতাকে সামনে আনছে। তিনি মন্তব্য করেন, ‘গোটা বাংলা বারুদের স্তুপের ওপর বসে আছে। হাওড়া আজকে জ্বলছে, এর দায় মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে। তিনি উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে লেলিয়ে দিচ্ছেন।’

বৃহস্পতিবার রাম নবমীর মিছিলে হামলার অভিযোগ ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত। ওইদিন সন্ধেয় বোমাবাজি, বোতল ছোড়ার অভিযোগে মুহূর্তে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন মিছিলের উদ্যোক্তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব়্যাফ নামে। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের সেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 4 =