বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ সংগঠিত হওয়ার পর যেভাবে পদ্ম শিবির বিরোধী দলগুলোর ওপর বিভিন্ন মামলায় ইডি, সিবিআই জোর তদন্ত ও গ্রেপ্তারি চলছে তাতে আশঙ্কার মেঘ দেখছে আম আদমি পার্টিও।
আপের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে,অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের পথে হাঁটবে ইডি অথবা সিবিআই। ইডির দ্বিতীয় তলব উপেক্ষা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। যদিও কেজরিওয়াল পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে ব্যস্ততার কথা বলে হাজিরা এড়িয়েছেন। দলের আইনজ্ঞরা যদিও বলে দিয়েছেন, তদন্তকারীদের এড়ানোর পরিণাম ভাল হবে না।
সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতি কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারি পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নিয়ে দলে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। কেজরিওয়ালের উপস্থিতিতে বিধায়ক, সাংসদ এবং দিল্লি পুর নিগমের কাউন্সিলরদের নিয়ে মঙ্গলবার বেশি রাত পর্যন্ত বৈঠক করেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। মদকাণ্ডে উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া জেলে। আগামী তিন মাসের আগে তাঁর জামিন পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের গত সপ্তাহের নির্দেশে। একই কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে জেলে আপের মুখ তথা রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং। পরিস্থিতি এমন যে মন্ত্রী অতীশিকে একাই ১১টি দপ্তর সামলাতে হচ্ছে। কারণ, কেজরিওয়াল, মণীশের পর দলকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং প্রশাসন চালানোর মতো নেতা বিশেষ নেই। সেই একই মদ কাণ্ডে কেজরিওয়ালকে গত সপ্তাহে তলব করে ইডি।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের বৈঠকে আপ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত করেছে, কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর কি পদত্যাগ করা উচিত নাকি তিহাড় জেলে বসে মুখ্যমন্ত্রিত্ব করবেন তিনি, এই প্রশ্ন নিয়ে তারা জনতার ‘মন কি বাত’ শুনবে। কেজরিওয়ালকে ইডির নোটিসে আপ কতটা দিশেহারা দলের এই সিদ্ধান্তেই তা স্পষ্ট। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতে হলে ইডি, সিবিআইকে আগাম উপ-রাজ্যপালের অনুমতি নিতে হবে। উপ-রাজ্যপালের বকলমে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেই অনুমতির ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর পক্ষে জেল থেকে সরকার পরিচালনা অসম্ভব। ফলে পদত্যাগই একমাত্র সমাধান। বিজেপির বক্তব্য, সব জেনেই আম আদমি পার্টি আসলে লোক খেপানোর জন্য জনতার মত নেওয়ার কথা বলছে।
এদিকে, কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর স্ত্রী সুনীতাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে, এমন সম্ভাবনার কথা ঘোরাফেরা করছে খোদ আপের অন্দরে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ সুপ্রিমো কেজরিওয়াল এবং স্ত্রী সুনীতা একটা সময় সহকর্মী ছিলেন। দু’জনেই ভারতীয় রাজস্ব সার্ভিসের প্রাক্তন অফিসার। দু’জনেই দীর্ঘ সময় আয়কর বিভাগের উঁচু পদে চাকরি করেছেন। কেজরিওয়াল ২০১০-এ চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে আসেন। সুনীতা স্বেচ্ছা অবসর নেন ২০১৬-তে। তিনি রাজনীতির প্রকাশ্য অঙ্গনে সেভাবে না থাকলেও দলের দৈনন্দিন কাজে যুক্ত।
সম্প্রতি একটি মামলা সূত্রে দিল্লির আদালতে হাজির হয়েছিলেন সুনীতা। সঙ্গে ছিলেন কেজরিওয়াল। বিজেপি সুনীতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে দিল্লি এবং উত্তর প্রদেশ, দুই রাজ্যে ভোটার তালিকায় নাম আছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর। এই ব্যাপারে বয়ান নিতে সুনীতাকে তলব করেছিলেন নিম্ন আদালতের বিচারক।
আপের অন্দরে জল্পনা আছে গ্রেপ্তার করা হলে লালুপ্রসাদের মতো কেজরিওয়ালও স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি এগিয়ে দিতে পারেন। আড়াই দশক আগে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত লালুপ্রসাদ যাদব গ্রেপ্তার হওয়ার আগে স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে মুখ্যমন্ত্রী করে গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার দিনেও রাবড়ি দেবী আর পাঁচ দিনের মতোই অনেকটা সময় রান্না ঘরে কাটান। তিনি ভোজপুরি ছাড়া অন্য কোনও ভাষা জানতেন না। ভোজপুরিতেও নিজের নামটুকু শুধু লিখতে পারতেন। নতুন মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে সরকারি প্রেস রিলিজে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় লেখা ছিল ‘শি ইজ এডুকেটেড’। রাবড়ি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরদিন পাটনার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন লালুপ্রসাদ।
তবে, শিক্ষাদীক্ষা এবং সামাজিক অবস্থানে রাবড়ি দেবীর সঙ্গে তুলনাই চলে না কেজরিওয়াল পত্নী সুনীতার। প্রাক্তন আমলার পক্ষে দিল্লির মতো রাজ্যের সরকার চালানো কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ফলে আপের অন্দরে জোর জল্পনা চলছে গ্রেপ্তারি এড়াতে না পারলে কেজরিওয়ালও হাঁটতে পারেন লালুপ্রসাদের রাস্তায়।