শ্বশুরকে খুনের অভিযোগে বউমা ও ছেলে গ্রেপ্তার, উঠছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ

মালদা: বিজেপি কর্মী খুনের অভিযোগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃতের ছেলে এবং পুত্রবধূকে গ্রেপ্তার করেছে বামনগোলা থানার পুলিশ। কিন্তু এই ঘটনার পরেও সোমবার দফায় দফায় তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল বামনগোলা থানার নালাগোলা পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায়। এমনকী, ওই পুলিশ ফাঁড়ির টিনের ঘেরা সীমানা পাঁচিল ভাঙচুর করে বিজেপির মহিলা কর্মী সমর্থকরা বলে অভিযোগ। ঝাঁটা নিয়ে এক মহিলা বিজেপি কর্মীকে পুলিশ কর্তাকে তাড়া করতে দেখা যায়। এই পরিস্থিতির মধ্যে নালাগোলা ফাঁড়ির সামনে বিক্ষোভ অবস্থান করেন উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার দলের সাংগঠনিক সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বামনগোলার থানার আইসি বিশাল কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।
বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর অভিযোগ, দলের প্রবীণ কর্মী বুড়ণ মুর্মুকে (৬০) তার ছেলে ও পুত্রবধূ মারধর এবং শ্বাসরোধ করে খুন করেছে। এই ঘটনার পিছনে এলাকারই আরো বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা জড়িত রয়েছে। তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। এই দাবিতেই সংশ্লিষ্ট পুলিশ ফাঁড়ির সামনে চলে বিজেপির অবস্থান বিক্ষোভ।
উল্লেখ্য, রবিবার সকালে বামনগোলা থানার মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের কন্যাদিঘি এলাকায় শোবার ঘর থেকেই বুড়ণ মুর্মুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতের শরীরের একাধিক জায়গায় রক্তের দাগ থাকায় তাকে তার ছেলে ও পুত্রবধূ খুন করেছে বলে অভিযোগ তোলে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মৃত বৃদ্ধের পুত্রবধূ শর্মিলা মার্ডি মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু নিকটতম বিজেপির প্রার্থীর কাছে ৫৬ ভোটে হেরে যায় শর্মিলা মার্ডি। যেহেতু বুড়ন মুর্মু এলাকার বিজেপির সক্রিয় কর্মী এবং নির্বাচনে সেই দল থেকেই প্রচার চালিয়েছিল। ফলে তার ছেলে বিপ্লব মুর্মু এবং স্ত্রী শর্মিলা মার্ডি ওই বৃদ্ধকে মারধর শুরু করেছিল। এরপরই রবিবার ওই বৃদ্ধের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। আর তারপর থেকেই ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয় বামনগোলা এলাকায়। বিজেপির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মৃতের ছেলে এবং পুত্রবধূকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু বিজেপির অভিযোগ এই খুনের ঘটনায় আরও কয়েকজনের নাম অভিযোগপত্রে দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু ওরা তৃণমূল করে। তাই সেইসব অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। আর এরই প্রতিবাদ জানিয়ে বামনগোলা থানার অন্তর্গত নালাগোলা পুলিশ ফাঁড়ির সামনেই বিক্ষোভে সোচ্চার হন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।
এদিকে এদিন বিজেপির শতাধিক মহিলা কর্মীরা হাতে দলীয় ঝান্ডা নিয়ে নালাগোলা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরিস্থিতি উত্তাল হতেই ওই পুলিশ ফাঁড়ির টিনের ঘেরা সীমানা পাঁচিল ভেঙে দেওয়া হয়। এমনকী পুলিশের সঙ্গে চলে বিজেপি কর্মীদের রীতিমতো ধস্তাধস্তি। কয়েক ঘণ্টা ধরে পুলিশ ফাঁড়ির সামনেই সাংসদ খগেন মুর্মুর নেতৃত্বে চলে বিক্ষোভ অবস্থান।
বিজেপির উত্তর মালদা সাংসদ কবে মুর্মু বলেন, আমাদের দলের প্রবীণ ওই কর্মীকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে তৃণমূল। মৃত ছেলে এবং তার স্ত্রী এই ঘটনায় যুক্ত থাকার পাশাপাশি এলাকার আরো কয়েকজন তৃণমূল নেতা জড়িত রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি। কিন্তু পুলিশ অভিযুক্ত বিপ্লব মূর্মু এবং তার শর্মিলা মার্ডিকে গ্রেপ্তার করলেও বাকিদের গ্রেপ্তার করার আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এমনকী পুলিশ এটি পারিবারিক গোলমাল বলে এড়িয়ে যেতে চাইছে। তারই প্রতিবাদে এদিন অবস্থান বিক্ষোভ করা হয়েছে। আগামীতে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আরো বৃহত্তর আন্দোলনের নাম হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ।
যদিও বিজেপির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে তৃণমূলের জেলা সভাপতি আধুর রহিম বক্সী। তিনি জানিয়েছেন, পারিবারিক বিবাদের জেরে এই ঘটনাটি ঘটেছে। এখানে তৃণমূলকে মিথ্যা ভাবে বদনাম করা হচ্ছে।
বামনগোলা থানার পুলিশ দু’জনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করার কথাও জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − fourteen =