শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে সরাসরি তার যোগ নেই। তবে কোনও একজনের কাছ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন পেয়েছিলেন। জেরায় এমনই দাবি জানিয়েছেন ইডি’র জালে ধৃত তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষ। কে এই তৃতীয় ব্যক্তি, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এদিকে অপর একটি সূত্র মারফৎ এও জানা যাচ্ছে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে কুন্তল, তাপস, গোপালের পর সামনে আসছে আরও একটা নতুন নাম। সূত্রে খবর, কুন্তলকে ঘোষকে দীর্ঘ জেরার পর একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে ইডি-র আধিকারিকদের হাতে। সূত্রের খবর, জেরায় গোপাল দলপতি ছাড়াও আরও এক ব্যক্তির নাম নাকি বলেছেন কুন্তল। তাঁরই কাছে থেকে কুন্তল নিয়েছেন ১০ শতাংশ কমিশন এমনটাও জানতে পারা যাচ্ছে। কিন্তু এই তৃতীয় ব্যক্তির সঙ্গে কুন্তলের কী সম্পর্ক কতটা গভীর তা জানতে দফায় দফায় জেরা করছেন ইডির আধিকারিকরা। এরই পাশাপাশি কোথায় কত টাকা দেওয়া হয়েছিল তাও জেরায় জানিয়েছেন কুন্তল।
এদিকে চিনার পার্কের দু’টি ফ্ল্যাটে একটানা ২৬ ঘণ্টা তল্লাশির পর গ্রেপ্তার হন কুন্তল ঘোষ। তল্লাশি চলাকালীন দফায় দফায় ইডি আধিকারিকরা কুন্তলকে জেরা করেন। বারবারই জানতে চাওয়া হয় চাকরি দেওয়ার নামে সত্যিই টাকা নিয়েছেন কি না। ইডি সূত্রে খবর, চাকরি দেওয়ার নামে টাকা যে তোলা হয়েছিল তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন যুব তৃণমূল নেতা। এরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পেশ করে ইডি। সে সময় তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য যে রিমান্ড কপি ইডির তরফে আদালতে জমা দেওয়া হয় সেখানেই কুন্তল কোন খাতে কোথা থেকে কত টাকা নিয়েছিলেন তাঁর বিশদ বর্ণনা রয়েছে বলে খবর। টেট থেকে শুরু করে নবম-দশম, দ্বাদশ-একাদশ, গ্রুপ সি, গ্রুপ-ডি নিয়োগ সহ একাধিক ক্ষেত্রে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়েছিলেন কুন্তল। তবে তাঁর দাবি, কোনও চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেননি। তৃতীয় ব্যক্তি চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তুলেছেন। তার কাছ থেকে কমিশন নিয়েছেন কুন্তল। তাঁকে জেরা করার সময় এ সংক্রান্ত বিশদ তথ্য পেয়েছেন, এমনটাও জানাচ্ছে তদন্তকারীরা।
আপাতত সূত্রে খবর, প্রাইমারির প্রার্থীদের নিয়োগপত্র জোগাড়ে ১০ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকার লেনদেন করেছেন কুন্তল। ইডি জেরায় এমনটাই জানিয়েছে। এর মধ্যে আপার প্রাইমারির নিয়োগ খাতে তিন কোটি ৩০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার লেনদেন করা হয়। ২০১৪-র টেট খাতে ৩ কোটি ২৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার লেনদেন করা হয় বলে খবর। নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশেও টাকার লেনদেন হয়েছে বলে খবর। তবে শুধু শিক্ষক নয়, শিক্ষাকর্মী নিয়োগেও বড় টাকার লেনদেন হয়েছে বলে খবর। গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি নিয়োগেও বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে কুন্তলের বিরুদ্ধে।
এদিকে ইডি সূত্রে এও জানানো হয়েছে, কুন্তল ঘোষের জোড়া ফ্ল্যাট থেকে একটি ছাই রঙের ডায়েরি ও একটি বড় মাপের নোটের খাতা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। দু’টিতে মিলেছে মোট ৪৯ কোটি ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকার লেনদেনের হিসাব। তাতে ছাই রঙের ডায়েরিতে তাপস মণ্ডল যে কুন্তল ঘোষকে ১৯ কোটি ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন, তার প্রমাণও মিলেছে। ১০ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, ৩ কোটি ৩০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা আপার প্রাইমারি শিক্ষক, ৫ কোটি ২৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা টেট ২০১৪ প্রার্থী নিয়োগের জন্য, যার মধ্যে ৩ কোটি ২৫ লক্ষ প্রার্থীদের পাশ করানোর জন্য নেওয়া হয়। অন্য খাতায় প্রাথমিক শিক্ষক, আপার প্রাইমারি, গ্রুপ সি ও ডি নিয়োগে কুন্তল ও তাঁর সঙ্গীরা ৩০ কোটি টাকা যে তুলেছেন, তার হিসাব রয়েছে।
তবে বিপুল পরিমাণ টাকা কীভাবে লেনদেন হত, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কুন্তলের মুখে উঠে আসা তৃতীয় ব্যক্তিটিই বা কে, তাও এখনও অজানা। কারণ, তৃতীয় ব্যক্তির কথা বললেও তার নাম জানায়নি কুন্তল। ধৃতকে জেরা করে এই সম্পর্কে আরও নানা তথ্য পাওয়া যাবে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।