হোয়াইটওয়াশের আতঙ্ক ভারতীয় শিবিরে, শেষ দিনে প্রোটিয়াদের জিততে চাই ৮ উইকেট

গুয়াহাটির মাঠে চতুর্থ দিনের শেষ ঘণ্টায় পুরো পরিস্থিতি যেন স্পষ্ট হয়ে উঠল ভারতের ড্রেসিংরুমেই। সাজঘরে মাথায় হাত দিয়ে নিশ্চুপ বসে থাকা প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীরের অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিল ভারতের টেস্টের বর্তমান অবস্থা। মাঠে খেলা চললেও কোচের চোখে-মুখে স্পষ্ট ক্লান্তি, হতাশা এবং অস্বস্তি—মনে হচ্ছিল, যেন মনে মনে হারের স্বীকারোক্তি আগেই করে নিয়েছেন তিনি। এখন কেবল আনুষ্ঠানিক ফলাফলের অপেক্ষা। চতুর্থ দিনের শুরু থেকেই ব্যাট করে যাচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

শুরুতে মনে হচ্ছিল, টেম্বা বাভুমা ও তাঁর দল যেন টেস্টের প্রথম দিনের মতো শান্ত-স্থির ব্যাটিং করছেন। অথচ এই পিচে ব্যাটিং যে খুব কঠিন নয়, তা আগের দিনেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। তবু তারা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং না করে সময় ব্যয় করল কেন—এই প্রশ্ন উঠতেই পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন উইকেটে ভারতের মতো ব্যাটিং লাইন-আপকে ৪৫০ রানের লক্ষ্য দিলেও ম্যাচ বের করে আনা কঠিন ছিল। সেই জায়গায় ৫৪৯ রানের লক্ষ্যে ভারতকে নামানো কতটা প্রয়োজনীয় ছিল, তা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল ভারতীয় ইনিংসে। চতুর্থ দিনের শেষ পর্যায়ে মাত্র এক ঘণ্টার একটু বেশি সময় ব্যাট করল ভারত।

কিন্তু এত কম সময়েই ভারতের ব্যাটারদের টালমাটাল অবস্থা বুঝিয়ে দিল কেন দক্ষিণ আফ্রিকা বড় লক্ষ্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পেসারদের বিরুদ্ধে কিছুটা স্থির দেখালেও স্পিনার নামতেই ধসে পড়ল ভারতের মনোবল। লোকেশ রাহুল প্রথমে দৃঢ় ছিলেন, কিন্তু ড্যান হারমারের প্রথম ওভারেই বোল্ড হয়ে ফেরেন। অফ স্টাম্পের বাইরে থাকা বল তিনি লেগসাইডে খেলার চেষ্টা করেছিলেন, যার সুযোগ নিয়েই বল ব্যাট-প্যাডের ফাঁক পেরিয়ে স্টাম্পে আঘাত করে। সোজা ব্যাটে খেলার চেষ্টা করলে বাঁচা যেত—বিশেষজ্ঞদের একবাক্যে মত।চতুর্থ উইকেটে গম্ভীরের অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত—কুলদীপ যাদবকে চার নম্বরে নামানো। প্রথম ইনিংসে দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৩৪ বল খেলা কুলদীপের উপর ভরসা দেখালেন কোচ, এবং কুলদীপও সেই ভরসা ধরে রাখলেন। দিনের শেষে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন তিনি। তবে তাঁকে সমর্থন করতে নামা সাই সুদর্শন ছিলেন যথেষ্ট অস্থির।

কয়েকবার আউট হতে হতে বেঁচে গেছেন তিনি, তবুও বড় ইনিংস খেলবেন এমন নিশ্চয়তা দেখা যায়নি। দিন শেষে ভারতের সংগ্রহ ২৭/২। সামনে আরও ৫২২ রানের পথ—যা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের সমীকরণ মাত্র ৮ উইকেট। পঞ্চম দিনে টিকে থাকা কি সম্ভব ভারতের জন্য? চতুর্থ দিনের খেলা দেখে সে আশা খুবই ক্ষীণ। স্পিনারদের বিপক্ষে ভারতীয় ব্যাটারদের ভয়, অস্থিরতা ও ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা প্রতিটি বলেই চোখে পড়েছে।খেলার নিয়ম বলে, শেষ দিন মাঠে নেমে ফলাফল নির্ধারিত হবে। কিন্তু খেলার ভাষা বলে, দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের অপেক্ষা কেবল সময়ের। ভারতের ব্যাটিং এতটাই অস্থির যে নিজেদের কোচ গম্ভীরও এই ব্যাটিং লাইন-আপের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। পঞ্চম দিনে অলৌকিক কিছু না ঘটলে ভারতের হার প্রায় নিশ্চিত বলেই ধরে নেওয়া যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 + eighteen =