যুব স্তরের তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ যদি শিক্ষক দুর্নীতির টাকার ১০ শতাংশ ভাগ পান, তাহলে বাকি ৯০ শতাংশ কে পেয়েছেন তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে সমাজের সর্বস্তরেই। একজনের কাছেই বিপুল অঙ্কের টাকা পৌঁছে গিয়েছে, নাকি ধাপে ধাপে চাকরিপ্রার্থীদের টাকা ঢুকেছে অনেকের পকেটেই সে রহস্যও উদ্ঘাটন করতে চাইছেন ইডি-র আধিকারিকেরা। আর এ নিয়ে নিশ্চিত হতে নিজেদের হেপাজতে পাওয়ার পর সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে দফায় দফায় কুন্তলকে জেরাও করছেন ইডির তদন্তকারীরা, এমনটাই ইডি সূত্রে খবর। কারণ , ইডি-র কাছে কুন্তল দাবি করেছেন, মোটা টাকা নিয়েছিলেন ‘তৃতীয় ব্যক্তিরা’। আর এখানেই ইডি-র আধিকারিকদের প্রশ্ন, কুন্তল নিজেকে আড়াল করতেই এমন দাবি করছেন কি না তা নিয়ে। তদন্তকারীরা অবশ্য হাল ছাড়তে রাজি নন। সেই কারণে এই ‘তৃতীয় ব্যক্তিরা’ কারা, তার খোঁজ চালাচ্ছে ইডি।এদিকে শনিবার গ্রেপ্তার হওয়ার পরই কুন্তলের মুখে গোপাল দলপতির নাম শোনা যায়। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, বেআইনি লগ্নিসংস্থার একটি মামলায় এখন তিনি তিহার জেলে বন্দি রয়েছেন। ইডি সূত্রের খবর, প্রয়োজনে আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। আবার, কুন্তলের নাম যিনি প্রথম প্রকাশ্যে এনেছিলেন, অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেই কর্তা তাপস মণ্ডল আবার তাপস মিশ্র ও তন্ময় গোস্বামী নামে আরও দু’জনের কথা বলেছেন।তাঁদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নিচ্ছে ইডি।
এখনও পর্যন্ত ইডি জানতে পেরেছে, তাপস মণ্ডলের কাছ থেকে ১৯ কোটি ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন কুন্তল ঘোষ। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ১০ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা, উচ্চ-প্রাথমিকের জন্য ৩ কোটি ৩০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এবং ২০১৪-র প্রাথমিকের টেটে চাকরিপ্রার্থীদের পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য ৫ কোটি ২৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল কুন্তলকে। কিন্তু তাপস সব জেনেও কেন টাকা দিয়েছিলেন, তা জানতে তাঁকে ফের তলব করা হতে পারে বলে ইডি সূত্রের খবর। তদন্তকারীদের দাবি, নিয়োগ-দুর্নীতিতে এই প্রতারণাচক্রের শিকড় অনেক গভীরে। সে পর্যন্ত পৌঁছতে আরও বেশ ক’জনকে জেরা করা হতে পারে। ইডি জেনেছে, শুধু প্রাথমিক বা উচ্চ প্রাথমিক নয়, এসএসসি-র গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি পদে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন কুন্তল। সব খতিয়ে দেখতে জনৈক তন্ময়, তাপস মিশ্রদের ভূমিকাও তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে।