নয়াদিল্লি: পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ও সরকার-পোষিত বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে, তাই কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রাখা হল। এর ফলে, ২৬,০০০-এরও বেশি শিক্ষকের চাকরি বাতিল হচ্ছে।
হাইকোর্টের রায় বহাল সুপ্রিম কোর্টে
২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) মাধ্যমে পরিচালিত এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে অবৈধ ও দুর্নীতিগ্রস্ত ঘোষণা করে এবং সমস্ত নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের রায়কে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করল এবং রাজ্যের যুক্তি খারিজ করে দিল।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ
প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, “এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভিত্তিই দুর্নীতির উপর দাঁড়িয়ে আছে। এটি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে এবং সম্পূর্ণরূপে বেআইনি। তাই এই চাকরিপ্রাপ্তদের চাকরি বাতিল করতেই হবে।”
রায়ে আরও বলা হয়েছে:
- এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে, ফলে এটি স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।
- চাকরি হারানো কর্মীদের ইতিমধ্যে প্রাপ্ত বেতন ফেরত দিতে হবে না, তবে এই রায়ের পর থেকে তারা আর কোনও বেতন পাবেন না।
- চাকরি হারানোর সময়কালটিকে ‘শূন্য পরিষেবা’ (vacant service) হিসেবে ধরা হবে না। অর্থাৎ ভবিষ্যতে নতুন নিয়োগ হলে এই প্রার্থীরা আগের চাকরির অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোনও অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন না।
শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রভাব ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের ফলে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড়সড় প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। একসঙ্গে এত সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি বাতিল হওয়ায় বহু বিদ্যালয়ে শূন্যপদ তৈরি হবে। দ্রুত নতুন নিয়োগ না হলে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই রায়ের পর বিরোধী দলগুলি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে। তাদের অভিযোগ, শাসকদলের ছত্রছায়ায় এই দুর্নীতি হয়েছে এবং মেধাবীদের বঞ্চিত করে স্বজনপ্রীতি ও ঘুষের মাধ্যমে অনিয়মিত নিয়োগ হয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, রাজ্য সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে কী ধরনের স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।