কলকাতা : পশ্চিম বঙ্গ হিন্দি ভাষী সমাজের সাহিত্য সংস্কৃতি উপ-সমিতি গতকাল প্রেমচন্দের ১৪৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কলকাতার প্রেমচন্দ লাইব্রেরিতে “‘রঙ্গভূমি’ উপন্যাসের ১০০ বছর” বিষয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে। সাহিত্য সংস্কৃতি উপ-সমিতির সভাপতি কেশব ভট্টড় এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।
রাজীব পাণ্ডে বলেন, ভয় না পাওয়াই সুরদাসের শক্তি। সুরদাস তার ব্যক্তিগত সীমার মধ্যে প্রতিবাদ করে। সুরদাসের জমি পুরো সমাজ ব্যবহার করে, কিন্তু তার জমির সঙ্গে কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত নেই। জানসেবকের স্ত্রী ধার্মিক, কিন্তু তিনি অন্য ধর্মের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেন। নারী চরিত্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে দৃঢ় চরিত্র সোফিয়ার। তিনি যুক্তিবাদী স্বভাবের এবং ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিনয় একজন সমাজসেবী। জন আন্দোলনের মুখোমুখি হলে মহেন্দ্র প্রতাপ সিংয়ের প্রকৃত চেহারা প্রকাশ পায়। জানসেবক সুরদাসের জমিতে সিগারেট কারখানা তৈরির জন্য নিজে জমি দখল করতে যান না, বরং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও পুলিশকে সামনে রাখেন। ১০০ বছর পরেও আজকের ভারতে এটি প্রাসঙ্গিক। ১০০ বছর আগে প্রেমচন্দ ধর্ম নিয়ে যে চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছিলেন, তা আজ নিষিদ্ধ |
শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল বলেন, আজ গোটা বিশ্ব যে সমস্যাগুলির সঙ্গে লড়ছে, তার বর্ণনা এই উপন্যাসে রয়েছে।
সভাপতি কেশব ভট্টড় বলেন, প্রেমচন্দ সুরদাসের মতো সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি চরিত্রকে নায়ক হিসেবে তুলে ধরেছেন। “রঙ্গভূমি” শব্দটি রঙ্গমঞ্চ থেকে অনুপ্রাণিত, যা জীবনের বিভিন্ন রঙ ও নাটকীয়তাকে প্রতিফলিত করে। উপন্যাসে সুরদাসের মতো চরিত্রের মাধ্যমে প্রেমচন্দ সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং নৈতিক সংগ্রামকে চিত্রিত করেছেন। প্রেমচন্দের ‘গোদান’ উপন্যাসের মঞ্চায়ন হয়েছে, কিন্তু ‘রঙ্গভূমি’-র মঞ্চায়ন হয়নি। উপন্যাসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের উল্লেখ রয়েছে। উপন্যাসে হিন্দু, ইসলাম এবং খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে কোনো কট্টরতা নেই, বরং সংলাপ রয়েছে। ১০০ বছর পরেও মৌলিক ব্যবস্থার কাঠামো একই রয়েছে। জনগণ রাজা-শাসকদের সুখ-সুবিধার জন্য শিকার হয়। ১০০ বছর আগে ক্ষমতার যে চরিত্র ছিল, আজও তা একই রয়েছে। সুরদাস সাহিত্যের মাধ্যমে তার লড়াই চালায়, গানের মাধ্যমে প্রতিবাদ প্রকাশ করে। ‘রঙ্গভূমি’ হল বিশ্বাসের ভূমিকে বদলানোর একটি প্রয়াস।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে গিয়ে সুমিত জয়সওয়াল বলেন, ‘রঙ্গভূমি’ উপন্যাস পড়ার আগে তিনি কোনো উপন্যাস পড়েননি। সুরদাস তার জমির জন্য শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করে। সুরদাস তার জমিকে পূর্বপুরুষের স্মৃতি হিসেবে বিবেচনা করে। সুরদাস ভারতের সেই কৃষকদের মধ্যে একজন, যাদের মধ্যে সৃষ্টি ও নির্মাণের তীব্র আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাহিত্য সংস্কৃতি উপ-সমিতির যুগ্ম সমন্বয়ক অভিষেক কোহার।

