কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সারপ্রাইজ ভিজিট রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের

আক্ষরিক অর্থেই ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’। সোমবার সকালে আচমকাই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে হাজির রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। এদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আসেন একবার নয়, দুবার। প্রথমে যান সকাল ১১টা নাগাদ সারপ্রাইজ ভিজিটে। তারপর সেখান থেকে রাজভবনে ফেরার পর দুপুরে ফের এক দফা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালেয় হাজির হন সিভি আনন্দ বোস। দুপুর তিনটে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকেন তিনি। এখানে বলে রাখা শ্রেয়, পদাধিকারবলে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এদিকে কিছুদিন আগে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি। উপাচার্যরা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের একটি সাপ্তাহিক রিপোর্ট নিয়ম করে রাজভবনে পাঠান, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়।
সূত্রে খবর, সকালে প্রায় ২০ মিনিট ছিলেন রাজ্যপাল। তবে এই সময় ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন না উপাচার্য। তবে রাজ্যপালের আসার খবর পেতেই তড়িঘড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান তিনি। এদিকে রাজভবন সূত্রে জানানো হয়েছে, এদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার কোনও পূর্ব কর্মসূচি ছিল না রাজ্যপালের। হঠাৎ-ই তিনি এদিন গাড়ি ঘুরিয়ে ক্যাম্পাসে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারের সঙ্গে।
এদিকে সোমবার দুপুরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আশিস চট্টোপাধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত কলেজগুলির অধ্যক্ষদের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসেন। এই বৈঠকের মূল বিষয় ছিল, জাতীয় শিক্ষা নীতি সংক্রান্ত বিষয়। এদিনের এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। সূত্রে এও জানা যাচ্ছে, কলেজের অধ্যক্ষদের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে তুলনা করেন তিনি। সূত্রের খবর, জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষরা যাতে অগ্রণী ভূমিকা নেন, সেই পরামর্শও দেন রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। রাজ্য সরকার যাতে এই বছর থেকেই জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করতে পারে, তার জন্য আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
একইসঙ্গে উপাচার্য এও জানান, ‘অধ্যক্ষদের সঙ্গে এদিনের বৈঠক আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। বিষয় ছিল নতুন শিক্ষানীতি। সেই বিষয়েই রাজ্যপাল অধ্যক্ষদের সঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।‘ এরই পাশাপাশি উপাচার্য এও জানান, অধ্যক্ষরা এটি চালু করতে তৈরিও রয়েছেন। তবে মাঝে বেশ কিছু সমস্যাও রয়েছে। আর তা হল পরিকাঠামোগত সমস্যা এবং শিক্ষক সংক্রান্ত সমস্যা। কারণ, নয়া শিক্ষানীতিতে এমন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, যেগুলি পড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক অনেক ক্ষেত্রে নেই। সেই সমস্যার সমাধান হলে অধ্যক্ষদের এটি চালু করার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াও স্নাতকোত্তর স্তরের অধ্যাপক ও ডিনদের সঙ্গেও আলোচনা করছেন রাজ্যপাল।
এদিকে এদিনের সি ভি আনন্দ বোসের এই সারপ্রাইজ ভিজিট অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজ্যের শিক্ষামহল এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। কারণ, রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য পদে নিয়োগ-পুনর্নিয়োগ ঘিরে রাজভবন-রাজ্য সরকার সংঘাত চলছিল। আর তা আইনি লড়াইয়েও রূপ নেয়। এদিকে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপচার্য নিয়োগ নিয়ে বড় ঘোষণা করে কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয় যে, কোনওভাবেই রাজ্যের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যদের নিয়োগ কিংবা পুনর্নিয়োগের ক্ষমতা নেই। পাশাপাশি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্য়ের কোনও এক্তিয়ার নেই। এদিকে রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এ প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন সি ভি আনন্দ বোসও। রাজভবনের তরফে দেওয়া একটি বিবৃতিতে বলা হয়, আচার্য পদের ক্ষেত্রে বর্তমান পদ্ধতিই বজায় থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যার অর্থ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য পদে থাকবেন রাজ্যপালই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 − 4 =