মহার্ঘ ভাতার দাবিতে আগামী ৯ মার্চ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন সরকারি কর্মচারিদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। যেখানে রাজ্য সরকারি দফতর, স্কুল, কলেজও রাখা হয়েছিল এই কর্মবিরতির আওতায়। এবার ৯ মার্চের জায়াগা আগামী ১০ মার্চ রাজ্য জুড়ে সরকারি দফতরে ধর্মঘটের ডাক দিল রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। ৯ মার্চ মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষা থাকার কারণ একদিন পিছিয়ে দেওয়া হয় ধর্মঘট। যদিও সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ধর্মঘট হলেও জরুরি কোনও পরিষেবা ব্যাহত হবে না।
এই ধর্মঘটের দিন বদল ঘটতে পারে, বুধবার সকাল থেকেই এমনটা কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল। কারণ, ৯ মার্চ মাদ্রাসার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ইংরেজি পরীক্ষা থাকায় এদিন সরকারি কর্মীরা ধর্মঘটের ডাক দিলে বড় সমস্যায় পড়তে হতে পারে পরীক্ষার্থীদের। এদিকে আন্দোলনরত কর্মীরা বারবার বলেছিলেন, সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়বে, এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ তাঁরা করবেন না। সেক্ষেত্রে পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখে ৯ তারিখ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্তই নিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা তেমনটাই জানা যায়। এই প্রসঙ্গে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চেক তরফ থেকে এও জানানো হয়, ‘কোনও পড়ুয়া সমস্যায় পড়ুক তা আমরা চাইব না। সেক্ষেত্রে ৯ তারিখে ধর্মঘট আদৌ করা হবে কিনা তা বিচার বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। তবে এখনই ধর্মঘটের তারিখ পরিবর্তন নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত মঞ্চের তরফে ঘোষণা করা হচ্ছে না। যদিও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’ তবে একইসঙ্গে এও জানানো হয় যে, ‘ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত থেকে তাঁরা সরে আসছেন না। তবে বদলাতে পারে তারিখ।’
এদিকে মহার্ঘ ভাতা নিয়ে বিক্ষোভের মাঝেই মঙ্গলবার শিলিগুড়ি থেকে বড় বার্তা দিতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে। তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মীরা আমার বন্ধু। তাঁরা আমাদের সাথী।’ কেন্দ্র রাজ্যকে বকেয়া না মেটালেও সরকারি কর্মীদের বেতন বন্ধ হয়নি, সেই প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি। পাশাপাশি ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল সরকার কত টাকা মহার্ঘ ভাতা বাবদ দিয়েছেন সেই তথ্যও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই করছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। বকেয়া ডিএ-র দাবিতে গত তেরো দিন ধরে শহিদ মিনারের নীচে অনশন বিক্ষোভ করছেন সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। যৌথ মঞ্চের নামে চলছে আন্দোলন। আইনি লড়াইয়ের পথেও হেঁটেছেন তাঁরা। বাজেটের দিন রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ৩ শতাংশ বর্ধিত মহার্ঘ ভাতার ঘোষণা করেন। যদিও এরপরেই আন্দোলনে কার্যত ঘৃতাহুতি পড়ে। কেন্দ্রের সঙ্গে মহার্ঘ ভাতার ফারাক তুলে ধরে রাজ্য সরকারি কর্মীদের দাবি ছিল তাঁদের ‘ভিক্ষা’ দেওয়া হচ্ছে। এরই রেশ ধরে আন্দোলনের আরও ধার বাড়ানোর কথা বলেছিলেন তাঁরা। গত ২০ এবং ২১ তারিখ কর্মবিরতির পথে হেঁটেছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশ। এরপরেও দাবি পূরণ না হওয়ায় আরও বড় কর্মসূচি ঘোষণা করেন সরকারি কর্মচারিরা। এবার সরকারের উপর চাপ বাড়াতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। যদিও পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখে বদল করা হচ্ছে এই ধর্মঘটের সূচি। যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, দলমত নির্বিশেষে সরকারি কর্মচারিদের প্রায় সব সংগঠনই তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে৷ ফলে এবারের ধর্মঘট সর্বাত্মক হবে।