জলস্তর নামছে, দক্ষিণ শহরতলির বহু এলাকা বঞ্চিত পুরনিগমের জল থেকে

২০২৩-এ তীব্র দাবদহের মাঝেও দক্ষিণ শহরতলির বহু এলাকার বাসিন্দা পুরনিগমের জল থেকে বঞ্চিত। কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, জল সরবরাহের নেটওয়ার্কহীন এলাকাগুলোর জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল তার মাত্র ৫০ শতাংশ এলাকাতে পাইপ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ এলাকায় এখনও কাজ বাকি রয়ে গিয়েছে।
এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করার সময় যে রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল জল সরবরাহ বিভাগের তরফে, তাতেই মূলত এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজেও স্বীকার করেন, জল সরবরাহের জন্য ৫০ শতাংশ এলাকায় এখনও পাইপলাইন বসানো বাকি রয়ে গিয়েছে।
এদিকে গত দেড় থেকে দু’বছরের মধ্যে দক্ষিণ শহরতলির বেশ কয়েকটি এলাকায় বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি হয়েছে। তা দিয়ে যেখানে পাইপলাইন রয়েছে, সেখানকার জল সরবরাহ এবং জলের চাপও বাড়ানো গেছে কিছুটা কিন্তু নেটওয়ার্ক এখনও বেশ কিছু এলাকায় তৈরি করে উঠতে পারেনি কলকাতা পুরনিগমের জল সরবরাহ বিভাগ।
এদিকে কলকাতা পুরনিগমের জল সরবরাহ বিভাগের তরফে যে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে, তাতে কপালে ভাঁজ কলকাতার জলের স্তর নিয়ে। কারণ দক্ষিণ শহরতলির ‘ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস’ থেকে যাদবপুর বা পাটুলির একাধিক অংশ, মুকুন্দপুর, নিউ গড়িয়া থেকে পঞ্চসায়র, টালিগঞ্জ থেকে হরিদেবপুর, বেহালা থেকে জোকা, একের পর এক এলাকায় আবাসন তৈরি হয়েই চলেছে। এদিকে কলকাতা পুরসভার তরফে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল, যে সব এলাকায় জল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি, সেখানকার ভূগর্ভস্থ জলের অবস্থা দেখেই আবাসন তৈরির ছাড়পত্র দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টো ছবিটাই সামনে আসছে। বেআইনি বাড়ির পাশাপাশি যেগুলি আইন অনুসারে নকশা মেনেতৈরি হচ্ছে, সেখানকার জল সরবরাহের ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক উন্নতি না থাকায় করা হচ্ছে গভীর নলকূপ। আর তাতেই বাড়ছে বিপদ। এদিকে মাসখানেক আগে ‘স্প্রিংগার নেচারর্স জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল আর্থ সায়েন্স’ -এ প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে কলকাতা পুরনিগমের অধীনস্থ এলাকায় জলের স্তর প্রতিবছর এক ফুট নীচে নেমে আসছে। ১৯৮৫ সাল থেকে ২০১৬ সালের তথ্যের উপর ভিত্তি করে হুগলি নদীর পূর্ব এবং পশ্চিম তীরে অবস্থিত শহরগুলিকে ঘিরেই সমীক্ষা থেকে সামনে আসে এই রিপোর্ট। একইসঙ্গে এও জানানো হয়, কলকাতায় ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নামার জেরে তিন-চতুর্থাংশই নোনা জলে পরিণত হয়েছে।
পাশাপাশি এই সমীক্ষায় এও জানানো হয়, দক্ষিণ কলকাতার পার্কস্ট্রিটের মতো মূল এলাকায় প্রতি বছর জলস্তর কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে ০.৩৩ মিটার অর্থাৎ প্রায় ১ ফুট। এখান থেকে এও আশঙ্কা করা হচ্ছে, দক্ষিণ শহরতলির আবাসন সমৃদ্ধ অথচ ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক নেই, এমন এলাকার জলস্তর নেমে যাওয়ার প্রবণতা প্রায় ২.৫০ মিটার। যা নিয়েই রীতিমতো আশঙ্কা জল সংক্রান্ত বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।
তবে আশ্বাসের বাণী শুনিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি জানান, ‘শুধু রিজার্ভার করলে হবে না। গড়িয়াতে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি হবে। খিদিরপুর থেকে জলের লাইন যাবে। সোনারপুর এবং ওই এলাকায় ওই প্ল্যান্ট থেকে জল যাবে। গার্ডেনরিচ থেকে কিছু মিষ্টি পানীয় জল এবং বাকিটা আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে জল তোলা হচ্ছে। পুরোটাই আগে টিউবয়েলের জল ব্যবহার করতেন বাসিন্দারা, এখন ঘরে ঘরে জলের ট্যাপ বসেছে। আগামী দিনে মিষ্টি জল পৌঁছে যাবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + 11 =