দেশ জুড়ে কার্যকর হল ওয়াকফ আইন, সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শুনানি সুপ্রিম কোর্টে আগামী সপ্তাহে।

 

বুধবার থেকেই দেশ জুড়ে কার্যকর হল সংশোধিত ওয়াকফ আইন। ৪ এপ্রিল সংসদে পাশ হয়ে রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেয়েছে ওয়াকফ সংশোধনী বিল। তারপর কেন্দ্রীয় সরকারের গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে বুধবার থেকেই তা দেশে কার্যকর হয়েছে।
এই নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পরেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে আইনের সাংবিধানিক বৈধতা ঘিরে আলোচনা। ইতিমধ্যেই একাধিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে। সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক পিটিশন, কেন্দ্রের ক্যাভিয়েট দাখিল করা হয়েছে, যার শুনানি আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে শুরু হবে ।

চলতি মাসের ৩ তারিখে লোকসভায় দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার আলোচনার পরে রাত দুটোয় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ হয় ২৮৮ বনাম ২৩২ ভোটে। পরদিন ৪ এপ্রিল রাজ্যসভাতেও মধ্যরাতে বিলটি গৃহীত হয় ১২৮ বনাম ৯৫ ভোটে। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে এটি আইনে পরিণত হয়। কেন্দ্র জানায়, ৪ এপ্রিল থেকেই আইন কার্যকর করা হবে।

যদিও আইন কার্যকর হওয়ার অব্যবহিত পরেই মুসলিম পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয় একাধিক জনস্বার্থ মামলা। জানা গিয়েছে, এখন পর্যন্ত মোট ১৫টি পিটিশন দাখিল হয়েছে। কংগ্রেস, এআইএমআইএম-সহ বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন এই আইনের কিছু ধারাকে সংখ্যালঘু অধিকার পরিপন্থী বলে দাবি করেছে। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই শীর্ষ আদালতে ক্যাভিয়েট দাখিল করেছে, যাতে সরকারের বক্তব্য না শুনে কোনও রায় না দেওয়া হয়।

ইসলাম ধর্মে সমাজকল্যাণ বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে যে সম্পত্তি দান করা হয়, তাকে ওয়াকফ বলা হয়। সেই সম্পত্তি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারযোগ্য নয়, বিক্রয়যোগ্যও নয়। মুসলিম সমাজের মতে, ওয়াকফ হল আল্লাহর সম্পত্তি। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, এতদিনকার আইনে ওয়াকফ বোর্ড জমিকে ‘ওয়াকফ’ বলে দাবি করলেই, আপত্তি সত্ত্বেও তা রেকর্ডে ওঠার সুযোগ ছিল। নতুন আইনে জেলা শাসকের হাতে দেওয়া হয়েছে সেই দাবির পর্যালোচনার চূড়ান্ত অধিকার। কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসেবে ঘোষণা করার আগে তা প্রশাসনিকভাবে যাচাই হবে।
ওয়াকফ প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনার লক্ষ্যে এই সংশোধন বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। এবার থেকে ওয়াকফ কাউন্সিলে সর্বাধিক ৪ জন অমুসলিম প্রতিনিধি ও ২ জন মহিলা প্রতিনিধি রাখা হবে। বোর্ডের গঠনেও আসবে বৈচিত্র্য। সম্পত্তি দখল সংক্রান্ত অভিযোগে দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গত নিষ্পত্তির ব্যবস্থাও থাকছে।
শুধু আইন নয়, সাংবিধানিক প্রশ্নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার আইনটি সংসদে নিয়মমাফিক প্রস্তাবিত ও আলোচনার ভিত্তিতেই গৃহীত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে এটি পূর্ণাঙ্গ আইন হিসেবে কার্যকর করা হল। ফলে সংসদীয় প্রক্রিয়ায় এর বৈধতা নিয়ে বিতর্ক নেই। যদিও আবেদনকারীদের আশঙ্কা, আইনটির কিছু ধারা সংখ্যালঘুদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সেই সাংবিধানিক প্রশ্নের নিরসনেই এখন দেশের নজর সুপ্রিম কোর্টের আসন্ন শুনানির দিকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − five =