নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: লাল মাটির জেলায় বাঁকুড়ায় অন্যতম শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা। ২০১৪ সালের পর থেকে দ্বারিকায় বন্ধ হয়ে যায় একের পর এক শিল্পের গেট, কাজ হারান এলাকার প্রায় হাজার পাঁচেক শ্রমিক। আশির দশকের মাঝামাঝি ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ‘বিষ্ণুপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টার’ তৈরি করতে উদ্যোগী হয়। বিষ্ণুপুর শহরের উপকণ্ঠে দ্বারিকা-গোসাঁইপুর পঞ্চায়েত এলাকায় জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। দ্বারিকা, শ্যামসুন্দরপুর, অবন্তিকা ও বিষ্ণুপুরের বাসিন্দাদের জমি নেওয়া নিয়ে বিস্তর ঝামেলার খবর মেলে।
নয়ের দশকে প্রথমে প্রায় ১৯৬ একর জায়গা জুড়ে শিল্পতালুকের পথচলা শুরু হয়। সরকারি ভর্তুকি নিয়ে ১০টি কারখানা চালু হয়। কর্মসংস্থান হলেও তারপরে যে ভাবে জ্বলে উঠেছিল কারখানার আলো, ২০১৪ সালের পর থেকে একে একে লিখতে থাকে কারখানার গতিপথ। দ্বারিকা গ্রামই নয়, আশপাশের শ্যামসুন্দরপুর, দেউলি, সুভাষপল্লি, অবন্তিকা, বনমালিপুর, জয়কৃষ্ণপুর, জয়রামপুর থেকে তিন শিফটে হাজার-হাজার শ্রমিক এই শিল্পতালুকে কাজে আসতেন। আর আজ কাজ হারিয়ে বিশ্বকর্মা পুজো এলেই হতাশা ঘিরে ধরে শ্রমিকদের।
বছর কয়েক আগেও বিশ্বকর্মা পুজোয় শিল্পতালুক আলোয় সেজে উঠত। বড় বড় শামিয়ানা ও মণ্ডপ তৈরি হত। গান-বাজনা হত। এলাহি খাবারের আয়োজন থাকত। ছেলেমেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে সকলে কারখানায় আসতেন বিশ্বকর্মা পুজো দেখার জন্য। আজ শিল্পাঞ্চলে কারখানাগুলোর গেটে বড় বড় তালা ঝুলছে, সন্ধে হলেই অন্ধকার ঘনিয়ে আসে, আর বিশ্বকর্মা পুজোও হয় না আলোর রশ্মিও দেখা যায় না। এখন শ্রমিকরা দিন গুনছেন, কবে এই শিল্পতালুকে কারখানাগুলি চালু হবে। গমগম করে উঠবে এলাকা, কাজ পাবে শ্রমিকরা।
অন্যদিকে, দ্বারিকা শিল্পাঞ্চল নিয়ে শাসক-বিরোধী একে অপরের দিকে কাদা ছোড়াছুড়ি করতেই ব্যস্ত। বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির মুখপাত্র দেবপ্রিয় বিশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফরকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘দ্বারিকা শিল্পাঞ্চল বন্ধ হয়েছে তৃণমূল সরকারের আমলে। দ্বারিকায় তৃণমূল কংগ্রেস নতুন শিল্প চালু করেছে সেটা হল দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলের মাল মেটিরিয়ালস বিক্রি করার।’ আর বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি বলেন, ‘দ্বারিকায় যে শিল্পগুলি ছিল সিপিএমের আমলে এই কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সেই জায়গায় নতুন করে তৃণমূল সরকার ভাবছে। ইতিমধ্যে একটি কারখানার পুনর্সংস্করণের কাজ শুরু হয়েছে, আগামী দিনের সমস্ত কারখানাগুলি চালু হবে এলাকার মানুষের সমস্যার সমাধান হবে।’