অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজের শুরুটা একেবারেই সুখকর হয়নি ভারতের জন্য। পার্থে প্রথম ম্যাচে শুভমান গিলের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল সাত উইকেটে পরাজিত হয়। শুধু হারের দিক থেকেই নয়, উদ্বেগের কারণ আরও বড়— টপ অর্ডারের ব্যর্থতা। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, শুভমান গিল এবং শ্রেয়স আইয়ার— চারজনের কেউই রান পাননি। ফলে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের উপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। বৃহস্পতিবার অ্যাডিলেডে দ্বিতীয় ওয়ানডে, যেখানে হার মানে সিরিজ হার। তাই ভারতীয় দলের প্রস্তুতি নিয়েই এখন সবার আগ্রহ চরমে।
অ্যাডিলেডে পৌঁছে মঙ্গলবার সকালে প্রথম অনুশীলনে নামে ভারতীয় দল। সকাল থেকেই বৃষ্টি থাকায় শুরুতে পরিকল্পনা ছিল ইন্ডোর প্র্যাকটিসের, কিন্তু মাঠকর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত মাঠেই নেটে নামা সম্ভব হয়। মাঠের কিছু অংশ ভেজা থাকায় পেসারদের জন্য ঝুঁকি ছিল, তাই হর্ষিত রানা ও অর্শদীপ সিং সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য মাত্র পনেরো মিনিট বল করেন। তবু অনুশীলনের তীব্রতায় কোনও ঘাটতি ছিল না ব্যাটারদের মধ্যে।
এ দিনের অনুশীলনের মূল আকর্ষণ ছিলেন তিনজন— রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি ও শ্রেয়স আইয়ার। এই তিন তারকার ব্যাটিং দেখা ছিল চোখের আরাম। তবে তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে সাবলীল দেখাল রোহিতকে। ‘হিটম্যান’ নামের যথার্থ মর্যাদা রেখে তিনি নেটে টাইমিংয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিলেন। গায়ের জোরে বল মারার চেয়ে শটের নিখুঁততা ও নিয়ন্ত্রণে মন দিয়েছিলেন তিনি। একাধিক বল সুন্দরভাবে ব্যাটের মাঝখান থেকে তুলে মাঠের চারদিক উড়িয়ে দিতে দেখা গেল তাঁকে।
অন্যদিকে, বিরাট কোহলির ট্রেনিং ছিল নিখুঁত পরিকল্পনায় ভরপুর। প্রথমে কয়েকটি বল খেলেই তিনি ‘থ্রো ডাউন’ স্পেশালিস্টকে পূর্ণ শক্তিতে বল করতে বলেন। এরপর প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে উচ্চ-তীব্রতার অনুশীলন করেন তিনি। কোহলির ব্যাট থেকে একের পর এক নিখুঁত কভার ড্রাইভ, পুল শট ও স্ট্রেইট ড্রাইভ বেরিয়ে আসছিল। তাঁর মনোযোগ ও একাগ্রতা দেখে স্পষ্ট, পার্থের ব্যর্থতার পর নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
শ্রেয়স আইয়ারও ছন্দ ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন। তিনি স্পিনারদের বিপক্ষে কিছু সময় কাটিয়ে ব্যাটিংয়ের স্থিতি আনতে মন দেন। তবে দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল রোহিত ও গিলের টেকনিক্যাল আলোচনা। পার্থে জশ হ্যাজেলউডের হার্ড লেংথ ডেলিভারি থেকে হঠাৎ বাউন্সে তাঁরা বিপদে পড়েছিলেন। সেই সমস্যার সমাধান খুঁজতেই দুই ওপেনার একান্তে কথা বলেন। রোহিতের অভিজ্ঞতা ও গিলের তরুণ উদ্যম মিলিয়ে সেই সমস্যার উত্তর খোঁজার চেষ্টা চলে নেটে।
সব মিলিয়ে, অ্যাডিলেডে মঙ্গলবারের প্র্যাকটিসে ভারতীয় শিবিরে দেখা গেল এক নতুন মনোভাব— আত্মবিশ্বাস ফেরানোর। দলের সিনিয়ররা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই ফিরবে ভারতের জয়ের হাসি।

