‘৬০ রান করলেও বলা হয়েছে আমি ব্যর্থ’, শতরানের খরা কাটিয়ে আক্ষেপ বিরাটের

‘ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইস পারমানেন্ট’ (ফর্ম সাময়িক, ক্লাস বরাবরের)… বিরাট কোহলির ব্যাটে রান না এলেই উঠে আসত এই কথাটা। একাধিকবার দেশ-বিদেশের ক্রিকেটাররা বিরাটের খারাপ সময়ের কথা বলতে গিয়ে যার উল্লেখ করেছেন। রানমেশিন কোহলি মাঠে নামলেই ভরপুর বিনোদন উপভোগ করত ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেই বিরাটের ব্যাটে যেন জং ধরে গিয়েছিল। ৭০ থেকে ৭১তম শতরান করতে গিয়ে কোহলির সময় লেগে গেল ১০২০ দিন। যা তিনি কল্পনাও করতে পারেন না।

তাও এটাই সত্যি। এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে কোহলির ৬১ বলে ১২২ রানের অপরাজিত ইনিংসটা অনেককিছু বলে দিয়ে গেল। জীবনে নানা উত্থান-পতন দেখেছেন বিরাট। সব কিছুর মধ্যে তাঁকে অবাক করেছে অন্য একখানা বিষয়। যা নিয়ে তিনি মুখ খুললেন আফগানদের বিরুদ্ধে এ বারের এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পর।

দুবাইতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৭১তম শতরান করেও বিরাটের মুখে শোনা গেল আক্ষেপের কথা। কোহলি বলেন, “সত্যি বলতে গেলে আজ ক্ষমতার বাইরে গিয়ে আমি ব্যাট করেছি বলে নিজেরই মনে হচ্ছে। যার ফলে আমি নিজেই বেশখানিকটা অবাক। তবে, আমাকে যা বেশি অবাক করত, তা হল আমার ৬০ রানের ইনিংসগুলোকেও ব্যর্থ বলে ধরে নেওয়া হত। আমি বেশ ভালো ব্যাট করতাম এবং দলের পারফর্ম্যান্সে অবদান রাখতাম। তবে আমার সেই ইনিংসগুলোকে যথেষ্ট ভালো বলে বিবেচনা করাই হত না।”
ইংল্যান্ড সফরের পর এক মাসের বিরতি নিয়ে এশিয়া কাপে ফিরেছিলেন বিরাট। তিনি জানতেন, তাঁর টেকনিকে ভুল ছিল না।

ব্যাটে-বলে সংযোগটা সেই অর্থে আগের মতো না হওয়াতেই সমস্যা হচ্ছিল। তিনি বলেন, “আমার জন্য অনেকেই অনেক পরামর্শ দিয়েছে, অনেক উপদেশই আমার পথে এসেছে। অনেকে আমাকে বলেছে আমি এই ভুল করছি, সেই ভুল করছি। আমি আমার সেরা সময়ের সমস্ত ভিডিও বেছে নিয়ে দেখেছি। একই রকম লেগেছে আমার। বলের দিকেও একই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। আমার মাথায় যা ঘুরপাক খাচ্ছিল, তা আমি কাউকে ব্যাখ্যা করতে পারিনি। দিনের শেষে আপনি একজন ব্যক্তি হিসেবে জানেন যেখানে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন, মানুষের মতামত আসবেই। কিন্তু আপনি যা অনুভব করছেন, তারা তা অনুভব করতে পারছে না।”

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বহু প্রতিক্ষিত সেঞ্চুরি করার পর ইনিংস বিরতিতে কোহলি বলেন, “এক মাস পরেই আমি ৩৪-এ পা দেব। গত আড়াই বছর আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে। সেই কারণেই রাগী সেলিব্রেশন আমার কাছে এখন অতীত।” মাঠের বাইরে যে কোহলিকে নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই, তা ভালো করেই জানেন বিরাট। তাই সেঞ্চুরির খরা কাটিয়ে তিনি বলেন যান, “আমি খুব ভালো করেই জানি, মাঠের বাইরে আমাকে নিয়ে অনেক কথা চলছিল।

অনেক কিছুর সমন্বয়ের মধ্যে দিয়েই এই সেঞ্চুরিটা এসেছে আমার ব্যাটে। তাই সেঞ্চুরির পর ম্যারেজ রিংয়ে আমি চুমু খেয়েছিলাম। আজ এই যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে রয়েছি আমি, সেটা সম্ভব হয়েছে একজনের জন্যই। সেটা অনুষ্কা ছাড়া আর কেউ নয়। এই সেঞ্চুরিটা ওকেই উপহার দিলাম। এবং উপহার দিলাম আমার ছোট্ট মেয়ে ভামিকাকেও।”

স্ত্রীর অবদানের কথা বলতে গিয়ে কোহলি আরও বলেন, “যখন কেউ আপনার পাশে থাকে, যে কোনও পরিস্থিতিতে আপনার সঙ্গে কথা বলে, আপনাকে বোঝে, তখন সব কিছুই আবার গুছিয়ে নেওয়া যায়। আমার কাছে অনুষ্কা ঠিক সেইরকম।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × four =