‘ভিলেন’ ভাম! কবে দরজা খুলবে রিষড়া রবীন্দ্র ভবনের, উঠছে প্রশ্ন

সুস্মিতা মণ্ডল

রিষড়া: বুড়ো থেকে বড়, রয়েছে বাচ্চাকাচ্চাও। এরাই সকলে মিলে নাকি হয়ে উঠেছে রিষড়া রবীন্দ্র ভবন সংস্কারের পথে ‘ভিলেন’। কখনও ফলস সিলিং ভেঙে দিচ্ছে, কখনও আবার নতুন তৈরি চেয়ারের গদির কাপড় ছিঁড়েখুঁড়ে একাকার করছে ভামের দল। আর তার জেরেই শেষ করা যাচ্ছে না রিষড়া রবীন্দ্রভবন সংস্কারের কাজ (Rishra rabindra Bhaban), এমনটাই জানাচ্ছে রিষড়া পুরসভা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ভামই এখন ভিলেন!
রিষড়ার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষরা জানাচ্ছেন, ২০১৫ সালে সংস্কারের জন্য এই হলটি বন্ধ করা হয়েছিল। এখন ২০২৩। যা পরিস্থিতি তাতে এবছর ২৫শে বৈশাখেও এই হল খোলার তেমন আশা দেখেছন না। রিষড়ার একমাত্র এই সাংস্কৃতিক হল যেখানে বিভিন্ন স্কুলের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, নাটক ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত, তা সবই বন্ধ। গত ৭ বছর ধরে আশপাশের শহরে অনুষ্ঠান করার জন্য ছুটতে রিষড়াবাসীকে। সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের আক্ষেপ, এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
রবীন্দ্রভবন খুলতে কেন এত গড়িমসি, সমস্যা ঠিক কোথায়, জানতে শহরের সংস্কৃতিপ্রেমী লোকজন একজোট হয়ে ‘রিষড়া সমন্বয় সাংস্কৃতিক মঞ্চ’-এর নাম দিয়ে রিষড়ার পুরপ্রধানকে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সম্প্রতি এ নিয়ে আলোচনাও হয়। আর তাতেই উঠে এসেছে ভামের উৎপাতের কথা। এ প্রসঙ্গে মঞ্চের এক সদস্য অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা পুরসভায় গিয়ে পুরপ্রধানের সঙ্গে সমস্যার কথা আলোচনা করি। তিনি বলেন, ভামের জন্য কাজ শেষ করতে অসুবিধে হচ্ছে। তবে ভামের উতপাতের জন্য হল হবে না এটা কোনও কথা নয়। প্রশাসনে যাঁরা আছেন, সমস্যার সমাধান করা তাঁদের দায়িত্ব।’
দীর্ঘদিন নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত রিষড়ার এক বাচিক শিল্পী রূপম বসুর কথায়, ‘হুগলি জেলায় রিষড়া স্টেশনের কাছেই রবীন্দ্রভবন। অনুষ্ঠান করার জন্য অবস্থানের দিক দিয়ে খুব সুবিধেজনক ছিল। এখন খারাপ লাগে যে নতুন প্রজন্ম এই রবীন্দ্রভবন কী জানল না। তাদের কাছে কোনও অনুষ্ঠানের শৈশব স্মৃতি তৈরি হল না। এ জন্য আমরা সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষরাই দায়ী। আমরাই হয়তো সেভাবে পুর কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে পারিনি এই হলটা আমাদের কাছে ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ।পুরপ্রধান বললেন, মূল সমস্যা ভামের জন্য। আমাদেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় পরামর্শ দেওয়ার। সেটা নিশ্চই চেষ্টা করা হবে।’
রিষড়ার প্রবীণ ব্যাক্তিত্বরাই জানাচ্ছেন, ৭০-এর দশকে প্রথম এই হল তৈরি হয়। পরে নতুন করে সংস্কার হয়েছে কয়েকবার। হলটি সংস্কারের জন্য শেষবার বন্ধ হওয়ার আগে সাড়ে ছশো আসন ছিল এখানে। একাধিক নামী শিল্পীরা অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন এই মঞ্চে। একসময় নাট্য প্রতিযোগিতা থেকে চিলড্রেনস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হয়েছে এই হলেই। তবে এখন সেসব অতীত।
এ প্রসঙ্গে পুরপ্রধান বিজয়সাগর মিশ্র জানান, তাঁরাও চান রবীন্দ্রভবন খুলুক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভাম। সংস্কারের জন্য রবীন্দ্রভবন বন্ধ করার পর থেকে প্রচুর ভাম বাসা বেঁধেছে। ফলস সিলিং, চেয়ার সবই নতুন করে বসানোর পর ভাম নষ্ট করে দিচ্ছে। তাঁরা হাওড়ার বিভাগীয় বনাধিকারিককে চিঠিও দিয়েছেন। কিন্তু সমস্যার সুরাহা হয়নি। আরও একাধিক পন্থা নিয়েছেন, তবে কাজ কিছুই হচ্ছে না।
সংস্কারের কাজ চলা রবীন্দ্র ভবনে ঢুকে দেখা গেল এদিক ওদিক ফলস সিলিং ভাঙা। বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ভামের উৎপাত এড়াতে বিশেষ মিউজিক বাজানো হচ্ছে। তবে তাতে নাকি ভামের কোনও হেলদোল হচ্ছে না, জানাচ্ছেন পুরসভার কর্মীরাই।
ভামকে ইংরেজিতে বলা হয় এশিয়ান পাম সিভেট (Asian palm Civet)। সাধারণ ভাবে তালের প্রতি আকর্ষণের জন্যই ইংরেজিতে এই নাম। এরা শহরের পরিবেশের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। কার্যত সর্বভুক হওয়ায় রসালো ফলের পাশাপাশি ছোটখাটো পোকামাকড়ও খাদ্যতালিকায় থাকে।
এই পরিস্থিতিতে রিষড়াবাসী চাইছেন বন দপ্তর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিক। যেভাবেই হোক, আগামী রবীন্দ্র জয়ন্তীতেই খুলে যাক রবীন্দ্র ভবনের দরজা। বিশেষ সূত্রের খবর, বন দপ্তর থেকে দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হতে পারে।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − 8 =