Howrah : নির্মাণের ৩২ বছর পর প্রথম সম্পুর্ন সংস্কার করা হবে বিদ্যাসাগর সেতুর, সংস্কারের কাজে আশঙ্কা যানজটের

দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা বিদ্যাসাগর সেতুর সংস্কারের কারণে আগামী ৮ মাস সেতুর উপরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলেই কলকাতা পুলিশ একটি নির্দেশিকাতে জানায়। ১ নভেম্বর বুধবার থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর উপর যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ শুরু হবে। সেতুর সংস্কারের কাজ ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলবে ৩০ জুন ২০২৪  পর্যন্ত। বুধবার রাত বারোটার পর থেকেই সেই কাজ শুরু করা হবে বলেই ওই নির্দেশিকাতে জানান হয়েছে। এই সময়ে সম্পুর্ন বিদ্যাসাগর সেতু মেরামতির কাজ করবে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশন (এইচআরবিসি)।

আর সেতুর সংস্কারের কাজ চলাকালীন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কলকাতা ও হাওড়ার প্রান্তে সমস্ত গাড়ি শহর থেকে ঢোকা ও বেরনোর জন্য বিকল্প পথ তৈরী করেছে কলকাতা পুলিসের ট্রাফিক বিভাগ। বিদ্যাসাগর সেতুর পরিবর্তে মূলত দু’টি বিকল্প পথের ব্যবস্থা করেছে পুলিস। একটি রুট যাতে, ছোট গাড়ি, বাইক, ট্যাক্সি, অ্যাপ ক্যাব ইত্যাদিকে স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে হাওড়া ব্রিজ দিয়ে হাওড়ার দিকে পাঠানো হবে। অন্য রুট দিয়ে, সমস্ত পণ্যবাহী গাড়ির জন্য পৃথক রাস্তার নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। সমস্ত হাওড়ামুখী পণ্যবাহী গাড়ি সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ-বিটি রোড-ডানলপ হয়ে নিবেদিতা সেতু দিয়ে যাতায়াত করবে। লালবাজার সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে, প্রয়োজন হলে শহরের অন্যান্য রাস্তা দিয়ে গাড়ির গতিপথ বদল করা হতে পারে। যদিও বুধবার থেকে সংস্কারের কাজ শুরু করা হলেও এখনই যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে না। মূলত কালীপুজা মিটলে তারপর থেকে যান নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু হবে। মাঝের সময়ে সেতুর উপর জমে থাকা ময়লা, ধুলোর আস্তরণ পরিষ্কার করার কাজ চলবে বলেই সূত্রের খবর।

সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে প্রথমে সেতুর উপর হাওড়া অভিমুখের লেনের সংস্কারের কাজ শুরু হবে। ওই কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর কলকাতা অভিমুখের লেনের কাজে হাত দেওয়া হবে। যদিও কলকাতা থেকে অন্য জেলা কিংবা পাশ্ববর্তী রাজ্যে যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় বিদ্যাসাগর সেতু।
যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণের গোটা বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখবে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ । তাদের নির্দেশ অনুসারে সেতুর হাওড়া প্রান্তের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে হাওড়া সিটি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ । রক্ষণাবেক্ষনের কাজের এই দীর্ঘ সময়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা। সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হাওড়া সিটি পুলিশের কাছে।

যার দরুন এই সময়ে সেন্ট্রাল অ্যাভি‌নিউ, বিটি রোড, ডানলপে ব্যাপক যানজটের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। অপরদিকে, স্ট্র্যান্ড রোড,  ব্র্যাবোর্ন রোড, ডালহৌসি, ধর্মতলাতেও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকবে। সেই চাপের মোকাবিলায় হাজির থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যাতে অতিরিক্ত পুলিস বাহিনী। রাতের শহরে প্রচুর সংখ্যায় পণ্যবাহী গাড়ি সেতুতে ওঠে। পাশাপাশি, ছোট গাড়ির সংখ্যাও যথেষ্টই থাকে। কলকাতা পুলিসের সূত্র অনুযায়ী, দিনের বেলা বিদ্যাসাগর সেতুর উপর দিয়ে ঘণ্টায় প্রায় ৬৭ হাজার দুই লেন সহ যানবাহন যাতায়াত করে। রাতেও সংখ্যাটা কম নয়। পাশাপাশি রাত্রে সেতুর দুই দিক মিলিয়ে ঘণ্টায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার গাড়ি যাতায়াত করে। স্বভাবতোই এত বিপুল সংখ্যক গাড়ির চাপকে মোকাবিলা করাই এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন কর্তব্যরত কলকাতা ও হাওড়া দুই পুলিশ অধিকারিকদের সামনে। তাই পুলিস মহলের একাংশের মতে, রাত ৮ টা থেকে সেতু সংস্কারের তোড়জোড় শুরু হয়ে যাবে প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই।

এই সেতুটি একটি ক্যাবল-স্টেয়েড সেতু, যেখানে ১২১টি কেবল একটি পাখার ব্যবস্থা রয়েছে, যা ১২৭.৬২ মিটার (৪১৮.৭ ফুট) উঁচু স্টিলের তোরণ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যাসাগর সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৮২৩ মিটার (২,৭০০ ফুট) যা কিনা ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘতম তারের সেতু। সেতুর ডেক দুটি ক্যারেজওয়ে সহ যৌগিক ইস্পাত-রিইনফোর্সড কংক্রিট দিয়ে তৈরি। সেতুটির মোট প্রস্থ ৩৫ মিটার (১১৫ ফুট), প্রতিটি দিকে ৩ লেন এবং প্রতিটি দিকে ১.২-মিটার (৩ ফুট ১১ ইঞ্চি)-প্রশস্ত ফুটপাথ রয়েছে। মূল স্প্যানের উপরে ডেকটি ৪৫৭.২০ মিটার (১,৫০০.০ ফুট) লম্বা। দুই পাশের স্প্যানগুলি সমান্তরাল তারের তার দ্বারা সমর্থিত এবং ১৮২.৮৮ মিটার (৬০০.০ ফুট) লম্বা। এটি দৈনিক ৮৫,০০০ এর বেশি যানবাহন পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখে। ডেকটি গার্ডারের একটি গ্রিড কাঠামো দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। গার্ডারের একটি সেট শেষের দিকে এবং আরেকটি সেট মাঝখানে থাকে, যেগুলি গড়ে ৪.২ মিটার (১৪ ফুট) কেন্দ্র থেকে কেন্দ্রে ব্যবধানে গার্ডার দ্বারা বাঁধা থাকে। সেতুর দুই পাশের স্প্যানে ৪ m × ৪ m (১৩ ft × ১৩ ft) স্টিলের বাক্স দিয়ে তৈরি পাইলনগুলি তৈরি করা হয়েছিল। যার একটি সেট কলকাতার দিকে এবং অন্যটি হাওড়ার দিকে। নির্মাণের পর থেকে ৩২ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও শেষ পাঁচ বছরে একাধিক অস্থায়ী মেরামতির কাজ করা হলেও সম্পূর্ণ সংস্কারের কাজ এই প্রথম বলেই সূত্রের খবর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 11 =