দেরাদুন, ১৯ নভেম্বর উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারায় সুড়ঙ্গের ভিতরে উদ্ধারকাজ নিয়ে উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগে ক্রমশ বাড়ছে। সাত দিন পেরিয়ে অষ্টম দিনেই পৌঁছেও সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪০ জন শ্রমিককে উদ্ধার করা যায়নি। সময় যত এগোচ্ছে, ততই আটকে থাকা শ্রমিকদের আশাটুকু একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকদের পরিবার প্রবল উৎকণ্ঠায় এক এক মুহূর্ত কাটাচ্ছে। একইসঙ্গে উদ্ধারকাজ নিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রবল ক্ষোভ।
উদ্ধারকাজ নিয়ে কী করা হচ্ছে, কোন পথে এগনোর চেষ্টা চলছে তা স্বচক্ষে খতিয়ে দেখতে রবিবার ঘটনাস্থলে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়করি এবং উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। সিল্কিয়ারায় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্য সচিব এসএস সান্ধু।
মুখ্যমন্ত্রী ধামি বলেন, ‘আমরা সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছি। সব ধরনের বিশেষজ্ঞ দল এখানে কাজ করছে। প্রত্যেকের জীবন বাঁচানো আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার… এর জন্য, রাজ্য সরকার সমস্ত সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সমস্ত সহায়তা দিতে প্রস্তুত… আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব যে তারা যেন তাড়াতাড়ি উদ্ধার পায়।’ অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়করি বলেন, ২টো যন্ত্র উদ্ধারকাজে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চললে, ২ থেকে আড়াই দিনে আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনো যাবে।
তবে একটু হলেও আশার কথা, সিল্কিয়ারা টানেলের উপরে পাহাড়ের চূড়া থেকে যে উল্লম্বভাবে ড্রিলিং করে রাস্তা তৈরির প্রচেষ্টা চলছিল, রবিবার বিকেলের মধ্যেই সেই গর্তটি খননের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত হতে পারে। আটকে পড়া শ্রমিকদের পর্যাপ্ত খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করার জন্য রবিবার সকালেই ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে ৪২ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত বড় ব্যাসের পাইপগুলিও ঢোকানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সুড়ঙ্গের বাইরে থাকা উদ্ধারকারীদের সঙ্গে শ্রমিকদের নিরন্তর যোগাযোগ থাকছে ঠিকই, কিন্তু উদ্ধার নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা যেন বেড়েই চলেছে তাঁদের মধ্যে।
উদ্ধারকারীদের কাছে শ্রমিকদের আর্জি, তাঁদের যেন দ্রুত উদ্ধার করা হয়। উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা উদ্ধারকারী এক আধিকারিক অরুণকুমার মিশ্র শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথাও হয় তাঁর। ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, শ্রমিকরা বার বারই জিজ্ঞাসা করেছেন, কখন তাঁদের উদ্ধার করা হবে। খাবার, জল, অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সুড়ঙ্গের ভিতরের পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা। আর সে কারণেই তাঁদের উদ্বেগ আরও বাড়ছে। উদ্ধারকারী আধিকারিক মিশ্র জানিয়েছেন, খোঁড়াখুঁড়ির কাজ কেমন চলছে, উদ্ধারকারী দল তাঁদের কতটা কাছে পৌঁছতে পেরেছে, কী ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে, ইত্যাদি জানতে চেয়েছিল শ্রমিকরা। তখন তিনি আশ্বস্ত করেন, তাঁদের উদ্ধারের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। দু’ভাবে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে রাস্তা বার করার চেষ্টা চলছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন (বিআরও) জানিয়েছে, সুড়ঙ্গের উপরের দিকে কোন জায়গায় খুঁড়লে দ্রুত শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনো যাবে, সেই জায়গাটি চিহ্নিত করা হয়েছে। রবিবার বিকেল থেকেই খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হওয়ার কথা।