অবশেষে পদত্যাগে রাজি হয়েছেন প্রায় একযুগ সময় ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পদ আঁকড়ে থাকা নাজমুল হাসান পাপন। পাপনের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিসিবির এক পরিচালক। এই পদত্যাগের একপ্রকার স্বস্তি হিসেবেই ধরছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের। কারণ অনেক দিন ধরেই পাপনের বিকল্প চাইছিল বাংলাদেশের কোটি কোটি ক্রিকেট অনুরাগী। তাঁর সরে যাওয়া নিয়ে একাধিক মিটিং-মিছিলও হয়েছে দেশ বিদেশে।
এখন একটাই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে, পাপনের জায়গায় কে আসছেন? ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন নাজমুল হাসান পাপন। তবে চলতি মাসের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। হঠাৎ তৈরি হওয়া উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও। বাদ যাননি দেশের ক্রীড়াঙ্গনের মানুষেরাও। তাঁদের মধ্যে অন্যতম বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। ৫ আগস্ট থেকে যাঁর খোঁজ এখনও মেলেনি। এতদিন বিসিবির সব কর্মকাণ্ডই ছিল সভাপতি নির্ভর। হঠাৎ করেই তাঁর আত্মগোপনে পুরো থমকে আছে বিসিবির কর্মকাণ্ড। সামনের মাসে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এ দেশে। যে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন জনতা। এই সময়ে কিভাবে চলবে বাংলাদেশের ক্রিকেট, এটাই প্রশ্ন দেশের প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমীর।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি কোথায় আছেন, সে বিষয়ে এতদিন তথ্য না পাওয়া গেলেও সম্প্রতি জানা গিয়েছে সস্ত্রীক লন্ডনে রয়েছেন। কেন না তিনি বরাবর লন্ডনকেন্দ্রিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচক জানিয়েছেন, নাজমুল হাসান পাপন বিসিবির সভাপতির পদ থেকে সরে যেতে রাজি। এ প্রসঙ্গে বোর্ডের প্রভাবশালী পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিসিবির ওই পরিচালক দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, পাপন ভাই সমঝোতা করতে চান। তিনি সরে যেতে চান বিসিসির পদ থেকে। এ নিয়ে আমার সঙ্গে সরাসরি কোনও কথা হয়নি। তবে তিনি সরে যেতে চেয়েছেন। অনেক দিন ধরেই সভাপতি পদের জন্য আলোচনায় ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্জতা। কেউ কেউ চাইছিলেন মাশরাফিকে দেওয়া হোক এই দায়িত্ব। কিন্তু সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে সেই আশা শেষ হয়ে গিয়েছ অনেক আগেই।
আর তাই এখন আলোচনা, পাপন চলে গেলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের হাল ধরবেন কে? এরই মধ্যে অনেক নাম থাকলেও সবচেয়ে বেশি যে নামটি উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে ফারুক আহমেদ ২০০৩-২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবালদের মতো কিছু তরুণের মধ্যে সম্ভাবনা দেখে তাঁদের জায়গা করে দেন জাতীয় দলে। যখন তিনি দায়িত্ব ছাড়েন, তখন তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-সাকিবরা হয়ে উঠছেন দলের ভরসা, তারকা। এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৩ সালে তিনি প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পান। কিন্তু বিসিবির দ্বিস্তরের নির্বাচক কমিটি, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, সীমাহীন দুর্নীতির প্রতিবাদে ২০১৬ সালে পদত্যাগ করেন তিনি। যা বাংলাদেশ ক্রিকেটে পতত্যাগের একমাত্র ইতিহাসও বটে।
বিসিবির দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমি ৩০ বছর বাংলাদেশের ক্রিকেটে সময় দিয়েছি। যদি আমার কোনও সুযোগ থাকে, যদি আমি মনে করি কাজ করার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা হলেই দায়িত্ব নেব।’ ফারুক আহমেদ বলেন, যারা ২৫-৩০-৩৫ বছর ধরে বোর্ডের শীর্ষস্থান আঁকড়ে ধরে আছেন, তাঁদেরও সরে যাওয়া উচিত। ওই কর্তাদের কর্ম মূল্যায়নের সময় হয়েছে বলেও জানান।