শ্যামপুর এলাকার স্কুলে শিক্ষককে মারধরের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার হাওড়া বড়গাছিয়া এলাকার নারায়ণ সিট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ উঠল। অভিযোগ স্কুলের প্রধান শিক্ষককে হেনস্থা এবং তার বিরুদ্ধে চাল চুরির অপবাদ দেয় স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও বড়গাছিয়া-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী সানি মল্লিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেদুর্নীতির অভিযোগ তুলে এলাকার কিছু মানুষকে খেপিয়ে তোলে। ওই স্কুলেই মিড ডে মিল রান্নার কাজে নিযুক্ত ছিলেন শমিতা শীল। ওই মহিলা বেশ কয়েক দিন ধরে অসুস্থ থাকায় অন্য একজনকে ব্লক আধিকারিকের অফিস থেকে নিয়োগ করা হয়। মিড ডে মিল পোর্টাল অনুযায়ী কোথাও ৩০০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী থাকলে সেই স্কুলে পাঁচ জন রাঁধুনির প্রয়োজন হয়। যদিও ওই স্কুলে ছাত্র সংখ্যা ২৮১ জন হলেও সেখানে পাঁচ জন রাঁধুনি রাখা হয়েছিল । ছাত্র সংখ্যার অনুপাতে রাঁধুনির সংখ্যা বেশি জানিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানালে সেখান থেকে একজন মহিলাকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর ওই তৃণমূল নেতা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ওপর চড়াও হয়। ঘটনায় ওই এলাকার একাধিক তৃণমূলের নেতৃত্ব সহ কর্মী জড়িত বলেই অভিযোগ। তাদের উপস্থিতিতেই প্রধান শিক্ষকের উপরে হামলার ঘটনা ঘটে বলেই স্থানীয় সূত্রে খবর।
বৃহস্পতিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুকূল প্রামানিক বলেন, ‘ মিড ডে মিলের নিয়ম অনুযায়ী ৩০০ জন ছাত্র স্কুলে থাকলে ৫ জন রাঁধুনি রাখা যায়। যদিও গরমের ছুটির পর আমার স্কুলে ছাত্র সংখ্যা ২৯২ জন হওয়াতে আমি মিড ডে মিল কমিটিতে বিষয়টি জানালে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় শমিতা শীলকে বসিয়ে দেওয়ার। ওই মহিলা মে মাস পর্যন্ত তিন হাজার টাকা মাইনে ঢুকেছিলেন। বাকি চার জন রাঁধুনি নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁদের মোট বেতন একত্রে পাঁচ ভাগ করে তাঁকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মতো তাঁকে দিতে গেলে তিনি অস্বীকার করেন নিতে। তাঁর দাবি ব্যাংকের একাউন্টে টাকা দিতে হবে , যেটা সম্ভব নয়। এরপর রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে এসে আমাকে গালিগালাজ ও হেনস্থা করে। আমি তাদের ব্লক আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলতে বললেও তারা আমার বক্তব্য কানে তুলতেই রাজি নন।’
যদিও বিষয়টিকে অস্বীকার করে পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী সানি মল্লিক দাবি করেন, ‘ আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন তিনশো জনের কম ছাত্র হলে ৫ জন রাঁধুনি রাখা যাবে না। যদিও কাউকে বসাতে হলে নতুন কাউকে বসিয়ে দেওয়ার নিয়ম আছে। সেই নিয়ম না মেনে ১৫ বছর ধরে কর্মরতা ওই মহিলাকে কেন বসানো হল এটা নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলেছি। ওই মহিলাকে শারীরিকভাবে কাজ করতে অক্ষম বলার অধিকার চিকিৎসকের রয়েছে, প্রধান শিক্ষকের নেই। আমরা এই নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানাবো।’
যদিও স্কুলের মধ্যে এই ঘটনাতে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে স্কুল চত্বরে।