মায়ের চাকরি যেতেই আত্মহত্যা করল মেয়ে। অন্তত প্রাথমিক ভাবে এমনটাই ধারনা এলাকাবাসীর। ঘটনাটি ঘটেছে বড়ঞা থানার কুরুন্নুরুন গ্রাম পঞ্চায়েতের কোগ্রাম এলাকায়। মৃতের নাম রিয়াঙ্কা ঘোষ(২০)। লাভপুর কলেজের ইংরেজির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রিয়াঙ্কা। এই ঘটনার সময়ে বাড়িতে মা ছিলেন না। বাবা সুশান্ত ঘোষ বাড়িতেই গ্যাসের ব্যবসা করেন। এদিকে সূত্রে খবর, স্কুল শিক্ষা দপ্তরের গ্রুপ সি পদে দুর্নীতি কাণ্ডে চাকরি বাতিল হয় বিভা ঘোষের। অভিযোগ, মায়ের চাকরি বাতিলের বিষয়ে জানার পরেই রবিবার বিকেলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন মেয়ে রিয়াঙ্কা ঘোষ। প্রসঙ্গত, চাকরি দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত কৌশিক ঘোষ ইতিমধ্যেই সিবিআইএর হেপাজতে। কৌশিক ঘোষের বোন বিভা ঘোষ বীরভূমে সত্যনারায়ণ শিক্ষানিকেতন গার্লস স্কুলে গ্রুপ-সি পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালে চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। স্কুল শিক্ষা দপ্তরের গ্রুপ-সি পদে দুর্নীতি কাণ্ডে হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি বাতিল হয় তাঁর। একই সঙ্গে বিভা ঘোষের বোন ডালিয়া ঘোষ মণ্ডলের চাকরিও বাতিল হয়। তিনি বীরভূমের কুনুটিয়া জ্যোতিষচন্দ্র হাইস্কুলে গ্রুপ-সি পদে কর্মরত ছিলেন। মা ও মাসির চাকরি বাতিলের বিষয়ে জানার পরেই মানসিক অবসাদে রবিবার বিকেলে মেয়ে রিয়াঙ্কা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে অনুমান। এই ঘটনায় রিয়াঙ্কার দাদা ও বাবা জানান, দুপুরে খাবার জন্য অনেক ডাকাডাকি করেও কোনও সাড়া শব্দ না পেয়ে ঘরের দরজা ভাঙতেই মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। দাদু সঞ্জীব ঘোষ জানান, ‘কোনও আওয়াজ না পেয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকতেই দেখি ওর দেহ ঝুলছে। কী কারণে রিয়াঙ্কা আত্মহত্যা করল বুঝতে পারছি না। তবে কয়েকদিন ধরেই মনমরা ছিল।’ রিয়াঙ্কার মৃত্যুতে স্থানীয়দের ধারনা, মামা কৌশিক ঘোষকে কিছুদিন আগেই সিবিআই গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে আবার মা ও মাসি দুজনেরই চাকরি বাতিল হয়। এলাকাবাসী রাজধর মণ্ডল বলেন, ‘রিয়াঙ্কা পড়াশোনাতে খুব ভালো ছিল। কিছুদিন আগেই ওর মায়ের চাকরি বাতিল হয়েছে বলে জানতে পারি। সেই কারণে হয়তো মানসিক অবসাদে ভুগছিল। তবে পুলিশ তদন্ত করলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।’
এদিকে বড়ঞা থানার পুলিশ সূত্রে খবর, দেহ ময়নাতদন্তের জন্য কান্দি মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। একই দিনে শিলিগুড়ি দেশবন্ধুপাড়ার ভাড়া বাড়ি থেকে বছর পঁয়তাল্লিশের দিলীপ বিশ্বাস নামে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনাতেও নিয়োগ দুর্নীতির যোগ সামনে এসেছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, দিনভর ঘরের দরজা না-খোলায় প্রতিবেশী দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখতে পান মশারিশুদ্ধ জড়িয়ে ওই যুবক খাটের পাশে পড়ে রয়েছেন। তবে কী ভাবে দিলীপবাবুর মৃত্যু হলো সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ সূত্রে এও জানা গেছে, ওই যুবক কোচবিহার জেলার হলদিবাড়িতে দারিপাট্টানি আপার প্রাইমারি স্কুলের গ্রুপ-ডি পদে চাকরি করতেন। আদালতের নির্দেশে তাঁরও চাকরিও চলে গিয়েছে বলে তাঁর পড়শিরা জানান। পাশাপাশি এও জানা গেছে, ২০১৮ সালে স্কুলের গ্রুপ-ডি পদে চাকরি পেয়েছিলেন দিলীপ। তবে চাকরি খোয়ানোর ঘটনাটি এতদিন এলাকার বাসিন্দাদের কাছে চেপে গিয়েছিলেন তিনি। চাকরি চলে যাওয়ার পরে শিলিগুড়িতে তিনি একটি প্রোমোটারি সংস্থায় চাকরি জুটিয়ে নেন। তাঁর আসল বাড়ি জলপাইগুড়ি জেলার দোমোহনিতে। স্কুলে চাকরি পাওয়ার পরেই তিনি শিলিগুড়িতে চলে আসেন। এদিকে প্রতিবেশীরা জানান, শনিবার পরিবারের লোকেদের ফোন করে দিলীপবাবু জানিয়েছিলেন বুক জ্বালা করছে। প্রেসার বেড়ে গিয়েছে। রবিবার সকালে তিনি ঘরের দরজা খোলেননি। বিকেলে প্রোমোটারি সংস্থায় দিলীপ বিশ্বাসের এক সহকর্মী এসে দরজায় ধাক্কা দিয়েও সাড়া না পেতে এলাকার কাউন্সিলারকে খবর দেন তাঁরা। খবর দেওয়া হয় পুলিশেও। এরপরই ঘরের দরজা ভেঙে দেহ উদ্ধার করা হয়। প্রতিবেশী সমর দত্ত বলেন, ‘দিলীপ আমার বাড়িতেই ভাড়ায় থাকতেন। মাস তিনেক হলো পাশের বাড়িতে ঘর ভাড়া নেন। দেহ উদ্ধারের পরে দিলীপ বিশ্বাসের এক আত্মীয় জানান যে ওর স্কুলের চাকরিটা চলে গিয়েছে।’ এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলার প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘যেভাবে দেহ পড়েছিল তাতে আত্মহত্যা বলে মনে হয়নি। হার্ট অ্যাটাকেই মারা গিয়েছেন সম্ভবত। পুলিশ দেহ ময়না তদন্তে পাঠিয়েছে। রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’