সম্পত্তির লোভে বাবাকে খুন করার অভিযোগ উঠল দুই ছেলের বিরুদ্ধে। সোমবার বাড়ির সেফটি ট্যাংক থেকে ওই বৃদ্ধের পচা গলা মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর বড় ছেলে পালিয়ে গেলেও ছোট ছেলে সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রায় ২৫ দিন নিখোঁজ ছিলেন ওই বৃদ্ধ। ঘটনার তদন্তে নেমে বৃদ্ধের দুই ছেলেকে পুলিশ ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে বাড়ির সেফটি ট্যাংকে লুকনো আছে বৃদ্ধের দেহ। সোমবার পুলিশ সেই ট্যাংক থেকেই উদ্ধার করেছে বৃদ্ধের পচাগলা বিকৃত দেহ। পুলিশ জানিয়েছে মৃত ব্যক্তির নাম সুভাষ প্রামানিক। ৬০ বছরের ওই বৃদ্ধ ১৬ তারিখ থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার অন্তর্গত বলপাই গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত পেরুর গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৬ তারিখ থেকে নিখোঁজ থাকলেও পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। পাড়ার লোকেরাই পুলিশকে জানিয়েছিল ১৬ তারিখ সুভাষকে তার দুই ছেলে দীপঙ্কর ও শুভঙ্কর ব্যাপক মারধর করে। সেই মারধরে জড়িত ছিল মৃত সুভাষের ভাই চন্দন ও তাঁর স্ত্রী গৌরিও। ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন সুভাষ। এরপরই পাড়ার লোকেদের সন্দেহ হয় যে ওই মারধরের ফলেই সুভাষ মারা যায়। আর তারপরই দেহ লোপাট করে দেওয়া হয়। প্রতিবেশী অলোক দাস অধিকারী, শক্তিপদ পয়ড়্যা , মধুসূদন মাইতি জানিয়েছেন, তাঁদের নামে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য প্রায়ই মারধর করা হত ওই বৃদ্ধকে। কিন্তু ছেলেদের সম্পত্তি লিখে দিলে বৃদ্ধ এবং তাঁর স্ত্রীকে বাড়ি থেকে ছেলেরা তাড়িয়ে দিতে পারে অনুমান করেই সুভাষ ছেলেদের সম্পত্তি লিখে দেয়নি। বছর খানেক আগে দুই ছেলে মিলে সুভাষকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেয়। দুই ছেলের অত্যাচারে ২ মাস আগেই গলায় দড়ি নিয়ে আত্মহত্যা করে বৃদ্ধের স্ত্রী। সুভাষ এই ঘটনার জন্য ছেলেদেরই দায়ী করতেন। আর তারপর থেকেই শুরু হয় লাগাম ছাড়া অত্যাচার। অবশেষে গত ১৬ জুন দুই ছেলে ও তাঁদের কাকা কাকিমা মিলে সুভাষকে ব্যাপক মারধর করে এবং মেরে দেহ ঢুকিয়ে দেয় সেফটি ট্যাংকে। ৯ জুলাই প্রতিবেশীরা নিজেরাই বিভিন্ন সূত্রে খবরা খবর নেওয়ার পর নিশ্চিন্ত হন সুভাষ কোথাও পালাননি, কোনও আত্মীয় স্বজনের বাড়ি যাননি। ওই দিন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ৫ প্রতিবেশী। এরপরই তদন্তে নামে পুলিশ। দু’দিন ধরে দুই ছেলেকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে সবং থানার পুলিশ। আর তারপরই ভেঙে পড়ে দুই ছেলে স্বীকার করে নেয় বাবাকে মেরে তাঁরা সেফটি ট্যাংকে গুম করে দিয়েছে। সোমবার পুলিশ গিয়ে সেফটি ট্যাংক থেকে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। ঘটনার পরই পলাতক বড় ছেলে। ছোট ছেলে সহ ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।