চাকরি পাইয়ে দিতে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে কীভাবে টাকা তুলে তা দিয়ে সম্পত্তি কেনা হয়েছে তা আদালতের কাছে তা তুলে ধরল ইডি। সেই টাকায় মিডলম্যান তথা এজেন্ট প্রসন্ন রায় ও তাঁর পররিবার ৩৯০ টাকা সম্পত্তি কেনে, দাবি ইডির। অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছেন মিডলম্যান তথা এজেন্ট প্রসন্ন রায় বলছে ইডি। সন্ধান মিলেছে প্রসন্ন রায়, তাঁর স্ত্রী ও সংস্থার দু’শোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেরও।
নিয়োগ দুর্নীতিতেই আগে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তারির পর সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পান প্রসন্ন রায়। সোমবার তলবের পর প্রসন্নকে গ্রেপ্তার করে ইডি। মঙ্গলবার তাঁকে ব্যাঙ্কশালে ইডির বিশেষ আদালতে তোলা হয়। প্রসন্নর জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা। প্রসন্নর গ্রেপ্তারির কারণ ইডি স্পষ্টভাবে না দেখানোর ফলে তা আইন মেনে হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। ইডির আইনজীবী ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেন। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে প্রসন্ন রায়কে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইডির হেপাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
আদালতে আবেদনে ইডি জানিয়েছে, প্রসন্ন রায় ও তাঁর স্ত্রী কাজল সোনি রায় ৯০টির উপর সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করেন। কয়েকটিতে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে প্রসন্নর সঙ্গী রোহিতকুমার ঝায়ের। এই সংস্থাগুলির মাধ্যমেই নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল টাকা পাচার হয়েছে। গত ১৮ জানুয়ারি প্রসন্ন রায়ের বাড়ি ও অফিসে ইডি তল্লাশি চালায়। প্রসন্নর অফিস থেকে ৩৯০টি সম্পত্তির দলিল ও ‘ডিড’ উদ্ধার হয়। দেখা গিয়েছে, গত ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রসন্ন রায়, তাঁর স্ত্রী, মা ও বাবার নামে এই সম্পত্তিগুলি কেনা হয়েছে। সাধারণভাবে সরকার নির্ধারিত দরের থেকে অনেক কম দামে এই সম্পত্তিগুলি কেনা হয়। টাকা পাচারের জন্য প্রসন্ন, তাঁর স্ত্রী ও সংস্থার নামে দু’শোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়।
ইডির দাবি, প্রসন্ন ও তাঁর লোকেরা চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা এসএসসির আধিকারিকদের পাঠাতেন। প্রসন্ন রায় ছিলেন মূল মিডলম্যান বা এজেন্ট যিনি চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলতেন। তাঁর সঙ্গে যোগ ছিল নিয়োগ দুর্নীতির অন্য মাথাদের। নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতে ৯৫২ জন চাকরিপ্রার্থীর ওএমআর শিট কারচুপি করা হয়। এ ছাড়াও ১৮৩ জন প্রার্থীকে প্যানেলের মেয়াদ ফুরনোর পর নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। একইভাবে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ৯০৭ জন চাকরিপ্রার্থীর ওএমআর শিট কারচুপি করা হয়। এই ক্ষেত্রে প্যানেলের মেয়াদ ফুরনোর পর নিয়োগপত্র পান ৩৯ জন প্রার্থী। তদন্তে দেখা গিয়েছে, মোট ২০৮১ জন অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে নবম-দশম শ্রেণির ক্ষেত্রে ১১৩৫ জন ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ক্ষেত্রে ৯৪৬ জন বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছেন। প্রসন্ন রায় ও তাঁর লোকেরাই এই চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে মোট কয়েকশো কোটি টাকা তোলেন।