আড়াই বছরের শিশু খেলার ছলে গিলে ফেলেছিল সেফটিপিন। খাদ্য নালীতেই আটকে ছিল সেটি। সেফটিপিনটির মুখ খোলা থাকার ফলে সেটিকে বের করে আনা রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং ছিল চিকিৎসকদের কাছে। অথচ রবিবার দুপুরে কার্যত অসাধ্য সাধন করল ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (Diamond Harbour medical college & hospital) ইএনটি(ENT) বিভাগ। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেফটিপিনটি নিরাপদে বের করে আনতে সক্ষম হন চিকিৎসকরা। তাঁদেরই তৎপরতায় জীবন ফিরে পেল শিশুটি। ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপের রুদ্রনগর এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর জানা ও সুজাতা জানা। তাঁদের একমাত্র সন্তান আড়াই বছরের সৌরনীল। রবিবার বাড়িতে খেলা করছিল সে। হঠাৎই সেফটিপিন খেয়ে ফেলে। এরপরই তার জ্যঠু চেষ্টা সেটি বের করে আনার চেষ্টা করলে একেবারে সোজা খাদ্যনালীতে চলে যায়। তড়িঘড়ি শিশুটিকে নিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। এক্সরে করার পর দেখা যায় সেফটিপিনটি খাদ্যনালীতে আটকে রয়েছে এবং সেফটিপিনটির মুখ খোলা। কাল বিলম্ব না করে শিশুটিকে নিয়ে আসা হয় ডায়মন্ডহারবার মেডিক্যাল কলেজে। তবে এই সেফটিপিনটি বের করা রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং ছিল। তার একটি কারণ সেফটিপিনের সূচালো পিনটি ছিল উপরের দিকে। সেই অবস্থায় বের করতে গেলে খাদ্যনালীতে ফুঁটে গিয়ে বিপদ হতে পারত। তাই এটি বের করতে গেলে পিনের সূচালো অংশটি ঘুরিয়ে নীচের দিকে করে দিতে হত। কিন্তু শিশুটির খাদ্যনালী বেশ ছোট হওয়ায় সেই কাজ করাও কার্যত অসম্ভব ছিল। রবিবার বিকেলেই ইএনটি বিশেষজ্ঞ দীপ্তেন পাল প্রায় এক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে খাদ্যনালী থেকে নিরাপদে সেফটিপিনটি বের করে নিয়ে আসেন। খাদ্যনালীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সাধারণত এই ধরনের সার্জারি করতে যেতে হয় অতি উন্নত পরিকাঠামো যুক্ত কলকাতার হাসপাতালে। কিন্তু ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজের ইএমটি বিভাগ কার্যত অসাধ্য সাধন করল। এই বিষয়ে ইএনটি বিশেষজ্ঞ দীপ্তেন পাল জানিয়েছেন, ‘আমরা নিরাপদে শিশুটির সেফটিপিন বের করে আনতে পেরেছি। আগে এই ধরনের ঘটনায় কলকাতার আরও উন্নত পরিকাঠামো যুক্ত হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হত। এখন এখানেই আমরা সেই রকম পরিষেবা দেওয়ারই চেষ্টা করছি।’ মেডিক্যাল কলেজের ডেপুটি সুপার সুপ্রিম সাহা বলেন, ‘ইতিমধ্যেই অনেক বড়বড় চিকিৎসার ক্ষেত্রে সফল হয়েছে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ। সুন্দরবন জেলার বহু মানুষ আসেন এখানে। ’
রবিবার মাইক্রোসার্জারির পর সোমবার থেকে শিশুটি স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া-দাওয়াও শুরু করে। একমাত্র সন্তান সুস্থ হয়ে ওঠায় দুশ্চিন্তামুক্ত বাবা-মা। শিশুর বাবা দীপঙ্কর জানা জানিয়েছেন, ‘মেডিক্যাল কলেজ আমার ছেলের প্রাণ বাঁচিয়েছে। এখন সুস্থ আছে সে। জানিনা ভাগ্যে কি লেখা ছিল! ভেবেছিলাম কলকাতায় নিজে যাব। তবে ডায়মন্ড হারবারে এত উন্নত মানের চিকিৎসা পাওয়া যাবে, ভাবতেই পারিনি।’