শতরূপের বিরুদ্ধে আইনি হুঁশিয়ারি কুণালের, আইনি চিঠি বিমান, সেলিমকেও

শতরূপকে এবার আইনি হুঁশিয়ারি কুণালের। স্পষ্ট বার্তা কুণালের তরফ থেকে যে, মানহানি হয়েছে, চাইতে হবে ক্ষমা। ক্ষমা না চাইলে শতরূপের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেন কুণাল। এদিকে সূত্রে খবর মিলছে, শতরূপের কাছে আইনি নোটিশ ইতিমধ্যেই পাঠিয়েও দিয়েছেন কুণালের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী। যে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে শতরূপকে তাতে লেখা হয়েছে, ‘২২ মার্চ আপনার গাড়ি নিয়ে করা কুণাল ঘোষের ফেসবুক পোস্টের পরেই আপনি একটি প্রেস কনফারেন্স করেন। যা রাজ্যের একাধিক বড় বড় সংবাদমাধ্যমে দেখানো হয়। যেখানে আপনি কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক অপমানজনক কথা বলেছেন।‘
এই চিঠি পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শতরূপে তাঁর করা মন্তব্যের জন্য ক্ষমতা চাইতে বলা হয়েছে। প্রেস রিলিজ, প্রেস কনফারেন্স করে নিজের ভুল স্বীকার করতে হবে শতরূপকে। যদি এই সময়ের মধ্যে ক্ষমা না চান তাহলেও তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় কুণালের আইনি চিঠিতে।
পাশাপাশি আইনি চিঠি পাঠানো হয়েছে বিমান বসু এবং মহম্মদ সেলিমকেও। এই নোটিশ পাঠানো প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, ‘বিমানদা, সেলিমদা একজন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান, আরেকজন রাজ্য সম্পাদক। ওঁদের অনুমোদনে পার্টি অফিসে বসে কুৎসা হয়েছে। ওঁরা অনুমোদন করেছেন, প্রচারে সাহায্য করেছেন। খারাপ কথার ৪৮ ঘন্টা পরেও নিন্দা করেননি। এতে প্রমাণিত, ওঁরা এই কুৎসার সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক।’
এই ঘটনার সূত্রপাত, বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গ সামনে আসতেই। তৃণমূলের তরফ থেকে প্রথমেই নিশানা করা হয় বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী জায়া মিলি চক্রবর্তীর নিয়োগ নিয়ে। এরপই নাম এসেছে সুশান্ত ঘোষের। এই শুশান্ত ঘোষকে নিয়ে বঙ্গ রাজনীতি উত্তপ্ত হয়েছিল কঙ্কাল কাণ্ডে। এরপর আরও তাবড় তাবড় বাম নেতারা জড়িয়ে গেছেন এই নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায়। সঙ্গে উঠেছে স্বজনপোষণের অভিযোগ। আর এই ঘটনার রেশ গিয়ে পড়ে একেবারে শতরূপের ২২ লাখের গাড়িতে। ২০২১ সালের নির্বাচনী হলফনামায় শতরূপের সম্পত্তির হিসেব ২ লাখ টাকা। সেই শতরূপ কীভাবে ২২ লাখ টাকার গাড়ি কিনলেন তা নিয়ে প্রশ্নও তোলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। পাল্টা কুণালকে আক্রমণ করতে গিয়ে ‘বিতর্কিত মন্তব্য’ করতে দেখা যায় বাম যুব নেতা শতরূপ ঘোষকে। এদিকে কুণাল প্রশ্ন তুলতেই শতরূপের স্পষ্ট উত্তর ছিল, ‘যে গাড়িটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি আমি জানুয়ারি মাসে কিনেছি। এই গাড়ির টাকা আমার বাবা নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের চেকে করেছেন। আমার বাবা-মা দুইজনেই কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থার কাজ করেছেন। বাবা চেকে এই গাড়ির টাকা দিয়েছেন। তার সব নথি আমার কাছে রয়েছে।’ এর পরেই রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘কেন্দ্রের যেমন আয়কর দফতর ও ইডি রয়েছে, তেমনই রাজ্যের হাতেও ইকোনমিক অফেন্স উইং বলে একটি সংস্থা রয়েছে। যদি কোথাও টাকা পয়সা নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকে তাদের, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় না বলে সেই সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করাতে পারে।’ এর পাশাপাশি শতরূপ এও বলেছিলেন, ‘বাবা কিনে দিলে পার্টি কী করতে পারে! আর টাকা-পয়সা নিয়ে সন্দেহ থাকলে তদন্ত করুক সরকার।’ পাশাপাশি এও বলেছিলেন, ‘আমি জানি না, হতে পারে কুণাল ঘোষের বাবার হয়তো কুণাল ঘোষ ছাড়াও অনামে বেনামে আরও এদিকে-ওদিকে সন্তান ছড়িয়ে ছিলেন। ওনার বাবা হয়তো যখন কিছু কিনতেন আমি জানি না, হতে পারে, ওনার প্রশ্ন শুনে মনে হচ্ছে, অফিসিয়াল আনঅফিসিয়াল, কোন সন্তানের নামে কিনবেন বুঝতে না পেরে নিজের নামেই কিনতেন। আমি জানি না উনি টেস্ট টিউব বেবি কিনা।’
সুজন জায়া মিলির স্ত্রীয়ের চাকরি নিয়েও একই সুর শোনা গিয়েছিল বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীর গলাতেও। তবে শতরূপের বক্তব্য মেনে নিতে পারেননি কুণাল। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এবার শতরূপকে আইনি নোটিশ কুণালের তরফ থেকে।
যদিও এ প্রসঙ্গে শতরূপ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত আমি কিছু পাইনি। মিডিয়ার মাধ্যমে শুনেছি। উনি নাকি ৭২ ঘণ্টা নাকি ৪৮ ঘণ্টা নাকি কিসব বলেছেন শুনছি। উনি পাঠান। দেখা হবে আদালতে।’ বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘কী পাঠিয়েছে জানি না। উনি পাঠাতে পারেন। এর আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে পাঠিয়েছিলেন কিন্তু, উনি বেশিদূর এগোননি।‘

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − fifteen =