ট্রাম কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্য। দূষণ ঠেকাতে এই গণপরিবহণের জুড়ি মেলা ভার। বিশ্বের তাবড় তাবড় সব দেশের শহরে তাই ট্রামের কদর বেড়েই চলেছে। ব্যতিক্রম কলকাতা। এখানে ট্রাম তুলে দেওয়ার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। ট্রামের জন্য নাকি যানজট হচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে, প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। যদিও রাজ্য সরকার কলকাতার চলমান এই ঐতিহ্যকে একদম বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে চাইছে না। সেই লক্ষ্যেই তাঁরা কলকাতার বুকে আম্ফান পূর্ববর্তী রুটগুলিকে যথাসম্ভব দ্রুত ফেরাতে চাইছে। এমনিতেই মূল কলকাতার দুই তৃতীয়াংশ এলাকা থেকে ট্রাম বলতে গেলে উঠেই গিয়েছে। আম্ফানের আগে শহরে ৭টি রুটে ট্রাম চলত। এই রুটগুলি হল টালিগঞ্জ থেকে বালিগঞ্জ, রাজাবাজার থেকে হাওড়া ব্রিজ, গড়িয়াহাট থেকে ধর্মতলা, ধর্মতলা থেকে শ্যামবাজার, হাওড়া ব্রিজ থেকে শ্যামবাজার, ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর, রাজাবাজার থেকে বিধাননগর। আম্ফানের পরে প্রথম ৫টি রুটে ট্রাম পরিষেবা চালু হলেও শেষ দুটি রুটে তা চালু হয়নি।
২০২০ সালে কোভিডের আবহ ও লকডাউনের মধ্যেই বাংলার বুকে আছড়ে পড়েছিল সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সেই ঝড়ের দাপটে কলকাতা কার্যত বিধ্বস্ত নগরীর রূপ ধারন করেছিল। উপড়ে পরেছিল হাজারো গাছ, ভেঙে ছিল তার থেকেও বেশি ল্যাম্পপোস্ট। বড় বড় গাছের নীচে চাপা পড়ে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল বেশ কিছু যাত্রীবাহী বাস, অটো, ট্যাক্সি। সেই ঝড়ের দাপটে রেহাই পায়নি শহরের ঐতিহ্যবাহী ট্রাম পরিষেবাও। অজস্র জায়গায় তার ছিঁড়ে গিয়েছিল, কোথাও কোথাও তারকে ধরে রাখার পোস্টও উপড়ে পড়েছিল। তার জেরে খিদিরপুর ও ধর্মতলার মধ্যে এবং বিধাননগর ও রাজাবাজারের মধ্যে দুটি রুটে ট্রাম পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের পুজোর মধ্যেই ওই দুই রুটে আবারও পরিষেবা চালু হয়ে যেতে পারে। এখন জানা গিয়েছে, এই দুটি রুট যাতে চালু করা যায় তার জন্য উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর যাওয়ার ৩৬ নম্বর রুটে ট্রাম ছুটত ধর্মতলা থেকে রেড রোড, ফোর্ট উইলিয়াম, রেস কোর্স, হেস্টিংস, ওয়াটগঞ্জ ও ফ্যান্সি মার্কেট হয়ে। অন্যদিকে রাজাবাজার থেকে বিধাননগরের ট্রাম যেত মানিকতলা, কাঁকুড়গাছি, হাডকো মোড় হয়ে। এই দুটি রুটই আম্ফানে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। এখন রাজ্য সরকার এই দুটি রুট চালুর জন্য যথাক্রমে ১.৩ কোটি ও ৭৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। আশা করা হচ্ছে এই দুটি রুটেই পুজোর আগে ট্রাম চালু হয়ে যাবে। তবে মেট্রো রেলের কাজের জন্য এখন সাময়িক ভাবে ৩টি রুটে ট্রাম বন্ধ রয়েছে। এই ৩টি রুট হল হাওড়া ব্রিজ থেকে শ্যামবাজার, ধর্মতলা থেকে শ্যামবাজার ও হাওড়া ব্রিজ থেকে রাজাবাজার। আশা করা হচ্ছে আগামি বছরের শুরু থেকেই শহরে ৭টি রুটে ট্রাম ফের চালু হয়ে যাবে পুরোদমে।