২০২৪-এ বিজেপিকে হারাতে মমতার দেখানো পথেই হাঁটতে হবে, দাবি থারুরের

২০২৪’র লড়াইয়ে বিজেপিকে হারাতে যে মমতার দেখানো পথে হাঁটা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই, কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে এমনই বার্তা পাঠালেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা শশী থারুর। তবে তাঁর এই বার্তা কংগ্রেস হাইকমান্ড আদৌ ধর্তব্যের মধ্যে আনবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রাজনীতিবিদদের একাংশই। এখানে বলে রাখা শ্রেয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগে থেকেই বার্তা দিয়ে আসছেন, বিজেপিকে হারাতে হলে যে যেখানে শক্তিশালী সেখানে তাঁকেই জমি ছেড়ে দেওয়া হোক। কংগ্রেস বা অন্য কোনও বিজেপি বিরোধী দল সেখানে যেন ভোট ভাগ করতে না যায়। তবে মমতার এই বার্তায় সায় দিতে দেখা যায়নি কংগ্রেস বা বাম শিবিরকে। তবে এখন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেবিরোধী ঐক্য নিয়ে অন্যান্য বিরোধী দলের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছেন ঠিক সেই সময়ে শশী থারুরের এই বার্তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা দেওয়ার কারণ, বিজেপির বিরুদ্ধে দেশের সব রাজ্যে যে আসন বন্টন করে জোট গড়া সম্ভব নয় সেটা অনেক আগেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন দূরদর্শী রাজনীতিবিদ মমতা। একই সঙ্গে বিজেপি বিরোধী এই লড়াইয়ে যে কংগ্রেস ক্রমশ তার রাজনৈতিক জমি হারাচ্ছে আর এই জমি যে আঞ্চলিক দলগুলির দখলে চলে যাচ্ছে তাও মমতা তুলে ধরেন জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে। কার্যত কংগ্রেসের নেতারা যে দাবিই করুক না কেন, কংগ্রেস যে আর বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার জায়গায় নেই সেটা বেশিরভাগ রাজ্যে ক্রমশই প্রকট হয়ে উঠছে। আর এই প্রেক্ষিতেই মমতা চেয়েছিলেন যে রাজ্যে যে বিজেপি বিরোধী শক্তিশালী দল আছে সেই রাজ্যে সেই লড়াই করুক বিজেপির বিরুদ্ধে। বিশেষ করে যে সব রাজ্যে কংগ্রেস দুর্বল, সেখানে অন্য দলকে কংগ্রেস হাইকমান্ড অর্থাৎ সনিয়া গান্ধি এবং পুত্র রাহুল গান্ধি জায়গা ছেড়ে দিক, যাতে বিজেপি-বিরোধী ভোটে বিভাজন না হয়। একই ভাবে যে সব রাজ্যে সরাসরি বিজেপি বনাম কংগ্রেসের লড়াই, সেখানে অন্য আঞ্চলিক দল গিয়ে বিরোধী ভোটে ভাগ বসাবে না। এবার শশী মমতার এই তত্ত্বেই ফের সিলমোহর দিলেন। তবে শুধু একা শশী-ই এই একই সুর শোনা গেছে মণীশ তিওয়ারি, অভিষেক মনু সিংভির মতো অন্য কংগ্রেস নেতাদের গলাতেও। কারণ, দেশের বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, বিজেপি দেশের অধিকাংশ রাজ্যেই ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পাচ্ছে না। কিন্তু বিরোধী ভোটের বিভাজনের ফলেই বিজেপি বেশির ভাগ রাজ্যেই জিতে যাচ্ছে। এখানে বলে রাখা শ্রেয়, পরিসংখ্যান বলছে, লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২০০টির মতো আসনে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই। গত লোকসভা নির্বাচনে অর্থাৎ ২০১৯-এ কংগ্রেস মাত্র ৫২টি আসন জিতেছিল। এখন তাই সব থেকে বেশি প্রয়োজন এই ৫৪৩টি আসন খতিয়ে দেখা। সেখানে নজর রাখতে হবে, কোন আসনে অ-বিজেপি দলের জেতার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি। সেখানে অন্য কেউ আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এসে ভোটে ভাগ বসাবে না। এটা করা গেলেই বিরোধী ঐক্য বাস্তবায়িত হবে। এমনটাই দাবি কংগ্রেসর নেতাদের একাংশের। মণীশ তিওয়ারির যুক্তি, এই কাজটা রাজ্য স্তরে সব থেকে ভাল ভাবে করা সম্ভব। রাজ্য স্তরেই আসন সমঝোতা বা বোঝাপড়া সেরে ফেলতে হবে। জাতীয় স্তরে জোট করতে হলে ন্যূনতম কর্মসূচি তৈরি করতে হবে। তাতে অনেক মতাদর্শগত বিরোধ চলে আসবে। সে সব সমস্যা মেটাতে বেগ পেতে হলেও, শুধুমাত্র কেন্দ্রে সরকার পরিবর্তন দরকার এটাকেই পাখির চোখ করে বিরোধীদের এককাট্টা করতে হবে। প্রয়োজনে কংগ্রেসকে এক পা পিছিয়ে দাঁড়াতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × one =