কলকাতা: স্বামীর বাড়িই তাঁর ঘর। তক্তপোশের ওপরই কেটে যায় দিন। বাড়ি বড়। তবে বয়সের ভারে জরাজীর্ণ। দেখাশোনার অভাব স্পষ্ট। উঠোন জুড়ে শ্যাওলা।ঘরও স্যাঁতস্যাঁতে। বেলঘড়িয়ার দেওয়ানপাড়ার এই বাড়িতেই থাকেন পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বয়স্কা মা।
মেয়ে ইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই ঘুম উড়েছে। মেয়ের সম্পত্তি, কাজ সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণা ছিল না বলেই দাবি তাঁর। আর এখন সেই মেয়ের জন্য ক্রমাগত প্রতিবেশী, আত্মীয়, সংবাদমাধ্যমের সামনে পড়ে তিষ্ঠোতে পারছেন না তিনি।এতবড় ধাক্কার পর কীভাবে মুখ দেখাবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
টালিগঞ্জের অভিজাত আবাসন ডায়মন্ড সিটি। সেখানে প্রায় আড়াই হাজার স্কোয়্যার ফিটের তিনরুম কামরার ফ্ল্যাট। একটা নয়, দুটো। যার বর্তমান মূল্য ২ কোটির বেশি তো কম নয়। এই বিলাস বহুল ফ্ল্যট ছাড়া শহর-শহরতলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বাড়ি। অথচ এই অর্পিতার মা থাকেন জরাজীর্ণ বাড়িতে।
অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাবা সরকারি চাকরি করতেন। তাঁর পেনসানেই দিনগুজরান করেন মা মিনতি মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর পৈত্রিক ভিটেয় থাকি। মাঝে মধ্যে বাপের বাড়ি, বোনের বাড়ি, ভাইয়ের বাড়ি ঘুরতে যাই।’ মেয়ের খবর শুনে নিজেই হতবাক। বললেন, ‘আমি একটা পুরনো বাড়িতে থাকি। কে বাইরে কী করছে না করছে আমি জানি না।’
এই বাড়িতে থেকেই বড় হয়েছেন অর্পিতা। এখান থেকে মডেলিং, অভিনয়ের দুনিয়ায় পা। মিনতিদেবীর দাবি বাবার চাকরি নিতে চাননি অর্পিতা। মেয়ে কোনও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলেই তাঁর ধারণা। তবে কী করে এত সম্পত্তির মালিক হলেন তা তাঁর জানা নেই।
মেয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। ৭৯ লক্ষ টাকার সোনার গহনা। ৫০ লক্ষ টাকার বিদেশি মুদ্রা। অথচ মাকে কোনও দিন এক পয়সাও দেননি অর্পিতা। তবে এই বাড়িতে তিনি মাঝে মধ্যেই আসতেন। খোঁজ নিয়ে যেতেন।
মেয়ের গ্রেপ্তারি মায়ের মন কি মানতে পারছে? মিনতি দেবী চান অভিযোগ প্রমাণ হলে তাঁর মেয়ের যথাযথ শাস্তি হোক। ‘ওর অপরাধ থাকলে ওর সাজা হবে।’ আর এ নিয়ে কথা শুনে-শুনে ক্লান্ত তিনি। বলেছেন, ‘দু’দণ্ড শান্তিতে কাটাতে চাই।’