নির্মীয়মাণ সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে মৃত্যু তিন জনের, অসুস্থ আরও ২

হরিহরপাড়া: নির্মীয়মাণ সেপটিক ট্যাঙ্ক হয়ে উঠেছিল মরণ কূপ। সেখানে নেমে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হল তিন জনের। উদ্ধারকাজে সহায়তা করতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ আরও দু’জন। প্রাথমিকভাবে অনুমান, ট্যাঙ্কে তৈরি হওয়া বিষাক্ত গ্যাসের জেরেই তাঁদের মৃত্যু হয়।
সোমবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থানার মাদারতলায়। উদ্ধারে দেরি হওয়ায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিন জনের। মৃতদের নাম রজম আলি (৪০), মাজারুল শেখ(২৮), মনিরুল শেখ(৩২)। তিন জনেরই বাড়ি হরিহরপাড়া থানার মাদারতলা। উদ্ধারে নেমে গুরুতর অসুস্থ দু’জনকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হরিহরপাড়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, ‘কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। পুলিশ ও চিকিৎসকদের প্রাথমিক অনুমান, বিষাক্ত গ্যাসেই মৃত্যু হয়েছে তিন জনের।’
গ্রামের আরসেলিম শেখের বাড়িতে সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরির কাজ করছিলেন রাজমিস্ত্রি। ইটের গাঁথনি দীর্ঘদিন আগে হলেও দিন পনেরো আগে ঢালাই করা হয়েছিল। সেদিন থেকেই বন্ধ ছিল প্রায় আট ফুট গভীরতার সেপটিক ট্যাঙ্ক। সোমবার সকালে দু’জন শ্রমিককে নিয়ে সেন্টারিংয়ের পাটাতন খুলতে যান রজব আলি। প্রথমে নীচে নামেই রজব। কিছুক্ষন পরে তার কোন সাড়াশধ না মেলায় নীচে নামেন মাজারুল শেখ। একইভাবে তারও কিছুক্ষন পর নীচে নামেন মনিরুল শেখ। তিন জনেই নীচে নেমে বিষাক্ত গ্যাসে আটকে পড়েন। খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা উদ্ধার কাজে হাত দেন। চেম্বারের উপরের ঢালাই ভেঙে দেখা যায় তিন জনই চেম্বারের নীচে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। উদ্ধার কাজে নীচে নেমে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল শেখ ও রবিউল শেখ। তারাও অচৈতন্য হয়ে পড়েন।
ইতিমধ্যে ইটভাটা থেকে আসে একটি জেসিবি। জেসিবি আসার আগেই জীবনের ঝুঁকি রুহুল ও রবিউলকে উপরে নিয়ে আসেন ওই গ্রামের যুবক আবদুল মান্নান। জেসিবি দিয়ে তোলা হয় বাকি তিন জনকে। পাঁচ জনকেই হরিহরপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আনা হলে চিকিৎসকরা তিন জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাকি দু’জনকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। মৃত মনিরুলের কাকা সরিফুল শেখ বলেন, ‘চেম্বারে নামার আগে ওদের আগুন জ্বালিয়ে তারপরই নামা উচিত ছিল। সেই ভুলেরই খেসারত দিতে হল।’ মাজারুলের কাকা হায়দার শেখ বলেন, ‘এই ঘটনায় গৃহস্তের কোন দোষ দিতে পারব না।’ আজ দুপুরে ময়নাতদন্তের পর দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। তিন মৃতদেহ লাইন করে গ্রামে ঢুকতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + four =